রিসার্স এন্ড এনালাইসিস ওইং


বাংলাদেশের একজন অতি পরিচিত (এবং সমালোচিত) ব্যক্তিকে আমেরিকা গত প্রায় ৩/৪ বছর আগে ভিসা দিতে অস্বীকৃতি জানায়। তিনি নারায়ণগঞ্জের সন্ত্রাসী গডফাদার শামীম ওসমান। আমেরিকান ঢাকাস্থ এম্বাসী পরিস্কার ভাষায় তাকে জানিয়ে দেয় যে, বাকী জীবনে তাকে আমেরিকার কোন ভিসা প্রদান করা হবে না।
 
আমেরিকা তাদের চোখে দেখা সকল বিদেশী সন্ত্রাসীদেরই তার ভুখন্ডে পা রাখার অনুমতি দেয়া থেকে বিরত থাকে। সন্ত্রাসীরা যেন মার্কিন ভুখন্ডে পা না রাখতে পারে- সেজন্য কিউবা থেকে দখল করা ক্ষুদ্র অংশ গুয়ানতানামো বে-তে একটা হাই সিকিউরিটি কারাগার বানিয়ে রাখা রয়েছে। কোন সন্ত্রাসীকে বিদেশে আটক করে তারপর সেই কুখ্যাত কারাগারে নিয়ে আসা হয় এবং প্রয়োজনে নির্যাতন চালানো হয়। সেখানে কোন বিচার বিভাগও নেই। তথ্য বের করার জন্যই সেই কারাগারটি ব্যবহৃত হয়।
 
সকলেরই মনে খাকার কথা যে, আল কায়েদার পরিচয়ে অসংখ্য মুসলিমকে বিশেষত ইরাক, পাকিস্তান ও আফগানিস্থান থেকে আটক করে সেই কারাগারে নিয়ে- কি অমানুষিক নির্যাতন করা হয়েছিল জর্জ বুশের প্রেসিডেন্সী সময়ে।
 
আসলে, ওসব বন্দিদের যদি মার্কিন ভুখন্ডে আনা হতো- তাহলে কোন প্রকার নির্যাতন চালানোর সুযোগ ছিল না- কোর্ট সেই সুযোগ দিত না। আর এদেশে কাউকে শারিরীক নির্যাতন করার ক্ষমতা কারো নেই। মানবাধিকার অত্যন্ত শক্তিশালি এই ভুখন্ডে। ‘গুয়ানতানামো বে’ মার্কিন ভুখন্ডের বাইরে হওয়ায় সেখানে মার্কিন কোন আইন কার্যকর নয়।
 
প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা ক্ষমতায় এসে তার এক্সিকিউটিভ অর্ডার বলে সেই নির্যাতনও নিষিদ্ধ ঘোষনা করেন।
 
প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প নির্বাচন পূর্বে বেশ কয়েকটি প্রচারণায় বলেছিলেন যে, সন্ত্রাসীদের কাছ থেকে তথ্য বের করার জন্য ওরকম নির্যাতনের প্রয়োজন রয়েছে বিধায় তিনি প্রয়োজনে এক্সিকিউটিভ অর্ডার দিয়ে আবারও সেই নির্মম নির্যাতন চালু করবেন।
 
ক্ষমতায় আসার পর যখন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প সাবেক একজন পেন্টাগনের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তার সংগে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করেন- তখন তিনি প্রেসিডেন্টকে হাসতে হাসতে বলেন যে, ‘মি প্রেসিডেন্ট, আপনি বরং আমাকে এক বোতল মদ আর এক প্যাকেট সিগারেট দেন- আমি সব তথ্যা বের করে দিচ্ছি।’ বুদ্ধিমান প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এরপর আর ওবিষয়ে আগান নি।
 
যাই হোক, আমেরিকা আরও এরকজন ভয়ংকর সন্ত্রাসী ও মৌলবাদী ব্যক্তিকে ‘মোষ্ট ওয়ান্ডেট’ হিসাবে মার্কিন ভুখন্ডে প্রবেশ নিষিদ্ধ করেছিল আজীবনের জন্য।
 
২০০২ সালে ভারতের গুজরাত রাজ্যের চীফ মিনিষ্টার মৌলবাদী ও সন্ত্রাসী নরেন্দ্র মোদী ১০০০ এর বেশী মুসলিম হত্যা করে। সেই অপরাধের পর ২০০৫ সালে আমেরিকা তাকে সন্ত্রাসী আখ্যা দিয়ে আজীবনের জন্য মার্কিন ভূখন্ডে প্রবেশ নিষিদ্ধ করেছিল।
 
কিন্তু সন্ত্রাসী নরেন্দ্র মোদী যখন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হয় এবং ভিয়েনা চুক্তি অনুযায়ী আমেরিকা নরেন্দ্র মোদীর উপর থেকে ‘প্রধানমন্ত্রী’ হিসাবে সেই নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করে নেয়।
 
২০১৪ সালের আগ পর্যন্ত এই কুখ্যাত সন্ত্রাসী ও মৌলবাদী নেতা নরেন্দ্র মোদী আমেরিকার তৈরী সন্ত্রাসী-তালিকাভুক্ত ছিলো এবং তার উপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা বহাল ছিল। এই হলো সন্ত্রাসী ভারতের মৌলবাদী প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী।
 
এই নরেন্দ্র মোদী বাংলাদেশকে তার করদ রাজ্যে পরিণত করার সুযোগটি কাজে লাগায়- বাংলাদেশের অবৈধ ও নষ্টা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে জোর পূর্বক ক্ষমতায় টিকিয়ে রাখার বিনিময়ে।
 
আমি আগেও বলেছি মুলতঃ বাংলাদেশকে বর্তমানে শাসন ও শোষন করার নেতৃত্বে রয়েছে ঢাকাস্থ গুলশানের ভারতীয় হাইকমিশন অফিস এবং তাদের সহযোগীতায় রয়েছে ‘র’।
 
রিসার্স এন্ড এনালাইসিস ওইং সংক্ষেপে ‘র’ ভারতীয় গোপন বাহিনী।
মুলত ততটা বুদ্ধিমান ও শক্তিশালী না হলেও তারা ভারতীয় উপমহাদেশের উপর সন্ত্রাসের নেতৃত্বে রয়েছে, নরেন্দ্র মোদী ক্ষমতায়য় আসার পর। পৃথিবীর অন্যতম শক্তিশালী গোয়েন্দা সংস্থা পাকিস্তানী আইএসের সংগে টিকতে না পারলেও বাকী দেশগুলিতে ভারত তার সন্ত্রাসী ও আগ্রাসী নিয়ন্ত্রন বজায় রাখতে ‘র’কে কাজে লাগচ্ছে।
 
আর সে সুযোগে তারা ঢাকাতে বর্তমানে বেশ কয়েকটি অফিস পর্যন্ত পরিচালনা করে চলছে।
 
বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকার গুলশানের ২০১৬তে হলি আর্টিজানে যে সন্ত্রাসী হামলা হয়- সেটাও ছিল এই ‘র’ এর-ই পরিচালনায়। অস্ত্রগুলিও এসেছিল ভারত থেকেই।
 
যাই হোক, সন্ত্রাসী মৌলবাদী প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী’র সময়ে ভারত বর্ষে কথায় কথায় গরু হত্যার কথা বলে মুসলিমদের নির্যাতন ও হত্যা করা হচ্ছে। পার্শ্ববর্তী মুসলিম কোন দেশ (পাকিস্তান ছাড়া) কোন প্রতিবাদ করছে না। করবেই বা কিভাবে? মালদিভস তাদের নিয়ন্ত্রণে। বাংলাদেশ তো এখন ভারতের করদরাজ্য নষ্টা শেখ হাসিনার বদান্যতায়।
 
সন্ত্রাসী ভারত সরকার কাশ্মিরের মুসলিমদের মানবাধিকার বঞ্চিত; এমনকি হত্যাও করা হচ্ছে কথায় কথায়- অনেকটা ইসরেলের সংগে (প্যালেষ্টাইনের) পাল্লা দিয়ে! বাংলাদেশ সীমান্তে তার বাহিনী দিয়ে মানুষ হত্যা করা হচ্ছে বন্দুকের গুলিতে।
 
কোথাও এসবের প্রতিবাদ করার কেউ নেই।
 
কিন্তু তার প্রকাশ্যে প্রতিবাদের আয়োজন করেন মাহমুদুর রহমান ও ফরহাদ মজহার। এই দুই ভদ্রলোকের একজন মাহমুদুর রহমানকে বাংলাদেশ সরকার ও সুপ্রিম কোর্টের ইতিহাসের সবচে বাজে ও নোংড়া মানসিকতার প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র সিনহা বাবুর নেতৃত্বে ৫ বছর, সকল নিয়মনীতিকে বৃদ্ধাংগুলি দেখিয়ে- বিনা কারণে জেল খাটিয়েছে, অকথ্য নির্যাতন করেছে এবং বর্তমানে চিকিৎসার করার জন্য বিদেশে যাবারও অনুমতি পর্যন্ত দিচ্ছে না- মানবাধিকার কেড়ে নিয়েছে।
 
কিন্তু মাহমুদুর রহমান সেসব অনাচার সত্বেও, অসুস্থ শরীর নিয়ে ভারতের বর্তমান মুসলিম নির্যাতন ও হত্যাকান্ডের প্রতিবাদ করেন আর সংগে নেন তার বন্ধু ফরহাদ মজহারকে।
 
ভারতীয় সরকার ও ‘র’র কর্মকর্তারা বিস্মিত হয় তাদের দু’জনের ‘সাহস’ দেখে!
বাংলাদেশের প্রধান রাজনৈতিক দল বিএনপি বা জামায়াত যেখানে প্রকাশ্যে ভারতের বিরুদ্ধে কথা বলার সাহস রাখে না- সেখানে এই ‘সামান্য’ দুইজন!
 
মুহুর্তে নয়াদিল্লী থেকে নিদর্দেশা আসে ‘র’র ঢাকাস্থ দফতরে। নির্মুল করতে হবে যে কোন মূল্যে মাহমুদুর রহমান ও ফরহাদ মজহারকে।
 
নয়া দিল্লী থেকে এতটা তরিৎ সিদ্ধান্ত আসে যে, শেখ হাসিনার সরকার জানার অাগেই ‘র’ গতকাল ফরহাদ মজহারকে কিডন্যাপ করে- সীমান্ত পথে ভারতে নিয়ে যাবার জন্য।
 
‘র’র উদ্দেশ্য ছিল তাকে সরাসরি সীমান্ত পার করে ভারতে নিয়ে যাবার।
এবং বাংলাদেশে বসে আর যে কেউ এমন ‘দুঃসাহস’ না করে ভারতের বিরোধীতা করার।
 
কিন্তু ঝামেলা হয়ে যায় দু’টি।
আগেই বলেছি ‘র’ পাকিস্তানী আইএস এর মতো এখনও ততটা ম্যাচিউরড নয়। তাদের হিসাবে কিছু ভুল হয়ে যায়। তারা ফোন করে তার স্ত্রীর কাছে ৩৫ লক্ষ টাকা দাবী করে এটা প্রমাণ করার জন্য যে- এখানে বাংলাদেশ সরকার বা ‘র’র কোন হাত নেই!
 
কিন্তু ঘটনাটি হিতে তাদের জন্য বিপরীত হয়ে যায়।
মুহুর্তেই বিষয়টি বাংলাদেশ সহ সারা বিশ্বে বিদ্যুৎ গতিতে ‘র’র সন্ত্রাসী চক্রান্ত্রটি প্রচারণা পেয়ে যায়। সোসাল মিডিয়াতে ব্যাপক প্রচারণা ও প্রতিবাদ শুরু হয়ে যায়।
 
ফরহাদ মজহারের মেয়ে তার বাবার বিদেশী বন্ধুদের সংগে যোগাযোগ করে। আমেরিকার বেশ কয়েকজন কংগ্রেসম্যান ও সিনেটর পর্যন্ত ফোন করে এর তীব্র প্রতিবাদ জানায়, সংগে অবৈধ হাসিনা সরকারকে হুমকীও প্রদান করে।
 
ওদিকে ‘র’- একই সংগে মাহমুদুর রহমানকেও অপহরণ করার ছক আঁকে।
 
শেখ হাসিনা সার্বিক পরিস্থিতিতে ঘাবড়ে যায়।
কি করবে সে!
কারণ ভারত তার কোন অনুমতির তোয়াক্কা করেনি এসব করতে।
 
‘র’র মুখোমুখি হয়ে যায় নষ্টা হাসিনা সরকার!
 
ভারত সরকারকে বুঝিয়ে এবং ফরহাদ মহজারকে প্রচন্ড ভয় দেখিয়ে ‘চুপ’ থাকার শর্তে মুক্তি দিতে বাধ্য হয় হাসিনা-মোদী সন্ত্রাসী চক্র।
 
বাংলাদেশের নিরাপত্তা-বাহিনীর সস্তা নাট্যকারদের কাছ থেকে ভুলে ভরা স্ক্রীপ্ট দিয়ে বেকুব দেশবাসীকে বোঝানো হয় ফরহাদ মজহার ‘বেড়াতে’ গিয়েছিলেন যশোর- কাপড় চোপড় আর মোবাইল চার্যার সংগে নিয়ে!
 
তবে, আমি পরিস্কার আশঙ্খা করছি ফরহাদ মজহার ও মাহমুদুর রহমানকে নিয়ে- যে-কোন মুহুর্তে এই অবৈধ নষ্টা হাসিনা এবং সন্ত্রাসী নরেন্দ্র মোদী মিলে এই দুই প্রতিবাদী সিংহ পুরুষকে না কোন বাহানায় হত্যা করে ফেলে।
 
বাংলাদেশের মানুষ এমন ভয়াবহ অবস্থায় বসবাস করেও কিভাবে চুপচাপ হাসিনা ও মোদীর নোংড়ামীকে দিনের পর দিন সহ্য করে যাচ্ছে- আমি ভাবতে পারি না।
 
শেখ হাসিনা আরও কতটা নীচে নামলে- এসব থামবে?
নাকি আরেকটা ১৫ই আগষ্টই অবশ্যম্ভাবী!
 
আরও একটা ১৫ই আগষ্টের জন্যই আমাদের হাত-পা গুটিয়ে বসে থাকতে হবে?
 
 
দুই।
আমেরিকার একটা দুর্দান্ত আইন হলো, পুলিশ কাউকে গ্রেফতার করলে গ্রেফতারকৃত ব্যক্তি যদি তার আইনজীবি ছাড়া পুলিশের সংগে কথা বলতে অস্বীকৃতি জানায়- তাহলে পুলিশ তাকে কোন জেরা করতে পারে না।
 
অর্থাৎ পুলিশ চাইলেই কোন নাগরিক-কে জেরা করতে পারবে না।
এবং পুলিশের কাজ হলো গ্রেফতার করে সর্বপ্রথম আদালতে সোপর্দ করা, আদালতের নির্দেশনানুযায়ী পরবর্তী পদক্ষেপ গ্রহন।
 
আর বাংলাদেশের আইনী প্রচলন হলো, পুলিশ কাউকে আটক করে প্রথমে মারধর করবে, তারপর টাকা-পয়সা দিয়ে তাকে ছেড়ে দেবার প্রলভন দেখাবে। টাকা-পয়সার দরদাম ঠিক-ঠাক না হলে আরও কিছু প্যাদানী দিয়ে অসুস্থ বানিয়ে তারপর সুবিধা মতো আদালতের মাধ্যমে জেলহাজতে বা হসপিটালে পাঠাবে।
 
আমেরিকায় পুলিশ কারো গায়ে হাত তোলার অধিকার রাখে না।
যদি ভুল করেও কোন পুলিশের আঘাত কেউ পায়- সে সরাসরি ঐ পুলিশের বিরুদ্ধে অভিযোগ করতে পারবে এবং আদালত বিষয়টি আমলে নিয়ে সত্যতা সাপেক্ষে সেই পুলিশকে শাস্তি প্রদান করবে।
 
বাংলাদেশের পুলিশের উপর কথা বলার কোন হ্যাডম কারো নেই। মন চাইলে পুলিশ যে-কাউকে গুম বা ক্রস ফায়ারের নামে হত্যা করার লাইসেন্স প্রাপ্ত।
 
যাই হোক, এখানেই সভ্যতা আর অসভ্যতার পার্থক্য।
সভ্য দেশ বাদ থাকুক, চলুন অসভ্যদের নিয়ে কিছু আলোচনা করি।
 
ফরহাদ মহজার ভারতের মুসলিম নির্যাতনের বিরুদ্ধে বন্ধু মাহমুদুর রহমানের সংগে সাংবাদিক সম্মেলন করলেন। ভারত সেটা সহ্য করলো না। বাংলাদেশ সরকারকে পর্যন্ত অন্ধকারে রেখে ভারতীয় লাইসেন্সড সন্ত্রাসী সংস্থা ‘র’ ঢাকা থেকে ফরহাদ মহজারকে চোখ বেধে মাইক্রোবাসে তুলে অপহরণ করার্থে তুলে নিয়ে যায় ভারতের উদ্দেশ্যে।
 
বিষয়টাকে ভিন্ন খাতে প্রবাহের জন্য, ‘র’ ৩০ লাখ টাকা চাঁদা দাবী করে।
আর বাংলাদেশ সরকার বা পুলিশ, রাব যেহেতু বিষয়টা জানেই না- সেহেতু তারা হতবাক হয়ে যায় এবং কোন কিছু না জেনেই এটাকে প্রথম থেকেই ‘গুম’ বা ‘অপহরণ’ বলে স্বীকার করতে অস্বীকৃতি জানা্য়।
 
কিন্তু সোসাল মিডিয়ায় ব্যাপক সমালোচনা এবং সর্বপরি আমেরিকান বেশ কয়েকজন কংগ্রেসম্যানের সক্রিয়তা ও হাসিনা সরকারকে তাদের হুমকীর প্রেক্ষিতে দেশের ডিবি, পুলিশ রাব ফরহাদ মজহারকে উদ্ধারে তৎপর হলে ‘র’ বাধ্য হয় খুলনায় গিয়ে তার চোখ খুলে দিয়ে ছেড়ে দেয়।
 
যাই হোক, পুলিশ তাকে উদ্ধার করে। ক্রেডিট নিতে বা অন্য যে-কোন কারণে রাব-পুলিশে মুখোমুখি অবস্থান পর্যন্ত নিতে দেখা যায় এবং শেষটায় তাকে ঢাকায় নিয়ে আসা হয়।
 
সারাদিনের ক্রান্তিকর অপহরন-উদ্ধার, নির্যাতনে বিদ্ধস্ত ফরহাদ মহজারকে হসপিটালে না নিয়ে সরাসরি ডিবি অফিসে নিয়ে গিয়ে ‘জেরা’ করা হয়। তাকে আরও অসুস্থ করে ফেলা হয় এবং সকালে শিখিয়ে দেয়া বুলি আদালতে পেশ করতে বাধ্য করা হয়।
 
আদালত তাকে ‘নিজ জিম্মা’য় মুক্তি দেয় এবং বারডেম হসপিটালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন বর্তমানে বিদ্ধস্থ ফরহাদ মজহার।
 
এদিকে দেশবাসী তথা আন্তর্জাতিক মহল বুঝে ফেলে যে ঘটনাটি ঘটিয়েছে ভারতীয় গুপ্তচর ‘র’ এবং বাংলাদেশ সরকার কিছুই জানতো না। সরকারের কোন কোন মন্ত্রী তা প্রকাশ্যে বলেও ফেলেন।
 
একটা বিষয় সকলেই জানে যে, এমনিতে দেশের ৯০% মানুষ ভারতীয় আধিপাত্যকে ঘৃণা করে, কিন্তু অনেকেই এটা জানেন না যে খোদ আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মী-সমর্থকদের মধ্যেও ন্যূনতম ৬০% ভারতীয় আধিপাত্যবাদকে মেনে নিতে পারছে না- বাধ্য হচ্ছে মেনে নিতে।
 
অসংখ্য আওয়ামী লীগার আমার কাছে সরাসরি তাদের ভারত-বিরোধী অভিমত প্রকাশ করে থাকে।
 
বিষয়টাকে ধামা-চাপা দিকে ভারত শেখ হাসিনা সরকারকে প্রেসার দেয় এবং ধামাচাপা দিতে পুলিশ ফরহাদ মজহারকে নিয়ে নতুন নতুন নাটক সামনে নিয়ে আসছে।
 
জীবন নাশের নিশ্চিত হুমকীর মুখে একজন মানুষ অসহায় হয়ে পরে।ফরহাদ মজহারও ঠিক তেমনি অসুস্থ হয়ে পরেছিলেন অপহরণের দিন। তাকে ঢাকায় এনে কোন আইনী সহায়তা দেয়া হয়নি, সরাসরি মিন্টো রোডের ডিবি কার্যালয়ে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের নামে ‘মুখস্থ’ শিখানো হয়েছে আদালতে কি বলতে হবে- নইলে এক্কেবারে শেষ করে দেবার হুমকী দেয়া হয়েছে- যেটা বাংলাদেশের নিয়মিত খেলায় পরিণত হয়েছে।
 
অসুস্থ, বিদ্ধস্ত, ক্লান্ত, পরিশান্ত ফরহাদ মজহার তোতা পাখির মতো পুলিশের শিখিয়ে দেয়া বক্তব্য দিয়ে আপাতত নিজের জীবন বাঁচিয়ে হসপিটালে চিকিৎসা নিচ্ছেন।
 
এরমধ্যে গতকাল যমুন টিভি ‘ফরহাদ মজহারের কথা ও বাস্তবতায় অমিল’ সিসিটিভি’র ফুটেজসহ প্রমাণ দিয়ে দিয়েছে, তাকে মিথ্যাবাদী প্রমাণ করেছে।
 
শাহবাগী মুক্তমনাদের ‘গোবরে মাথা’ থেকে প্রসুত অসংখ্য উল্লাসবানীও সোসাল মিডিয়ায় সয়লাব দেখতে পেলাম।
 
ভাবটা এমন যে তারা ‘জিতে’ গেছে।
 
ফরহাদ মজহার পন্থী কয়েকজনকে দেখলাম এতে অত্মপক্ষ সমর্থন করে বানীও প্রসব করতে।
 
আমি কোন কালেও ফরহাদ মজহারপন্থী নই। আমি বামপন্থী, কমিউনিষ্টদের অপছন্দ করি। ফরহাদ মজহার বামপন্থী হলেও প্রায়ই ‘সত্য’ কথা বলে অভ্যস্ত- তাই তার কথাকে কিছুটা গুরুত্ব দিই। তাকে অপছন্দ করি না কারণ তিনি মিথ্যা কম বলেন- মাঝেমধ্যেই দেখি সাহসের সংগে সত্য বলেন। যেমনটা সেই সাংবাদিক সম্মেলণেও সাহসের সংগেই সত্য উচ্চারণ করেছিলেন।
 
যমুনা টিভির ফুটেজযুক্ত নিউজটি দেখলাম।
সময়ের হিসাবের একটা ‘গরবর’ দেখানো হয়েছে। দুই, ‘গফুর’ নামে টিকেট কিনেছেন তিনি ঢাকাগামী।
 
যমুনা টিভি প্রমাণ করতে চেয়ে যে ফরহাদ মজহার ‘মুক্ত’ ছিলেন, তিনি নিজে স্বাধীনভাবে হাঁটাচলা করেছেন, বাসের টিকেট ইচ্ছেকৃতভাবে অন্য নামে ক্রয় করেছেন ঠিকই কিন্তু নিজের মোবাইল নাম্বারটি ঠিকই দিয়েছেন সেখানে, খাবারও খেয়েছেন।
 
অর্থাৎ ফরহাদ মজহার অপহৃত হননি, তিনি মিথ্যা বলেছেন।
 
আমার মাথায় কয়টা প্রশ্ন চলে আসলো।
মিথ্যা নাটকের অভিনয় করে তিনি কি বিখ্যাত হতে চেয়েছেন?
 
না। তিনি এমনিতেই যথেষ্ঠ বিখ্যাত। নতুন করে তার বিখ্যাত হবার কোন প্রয়োজন দেখছি না। তাছাড়া বিখ্যাত হবার চেষ্টা করে কেউ পুলিশি ঝামেলায় যাবেনা বা হসপিটালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসাও নিবে না। তাছাড়া তার চেহারা দেখলেই বোঝা যায় কতটা ভয়াবহ অবস্থা তিনি পার করেছেন।
 
এতে অন্তত প্রমাণিত হয় যে তিনি অপহৃত হয়েছেন।
 
তাহলে যমুনা টিভি আর কি প্রমাণ করতে চায়?
যারা তাকে অপহরণ করেছে- তারা তাকে জামাই আদর করে খাওয়াবে, টিকেট কিনে দিবে?
 
যমুনা টিভি অথবা ঐ ফুটেজ সরবরাহকারীরা যে কতটা ভুল করেছে সেটা তারা নিজেরাও জানে না।
 
১) ফরহাদ মজহার ৪টার ঘটনা ৭টার সময় বলা মানে মিথ্যা বলা নয়- ফরহাদ মজহার প্রচন্ড মানসিক দুরাবস্থার মধ্যে ছিলেন- সেটাই প্রমাণিত হয়েছে, তিনি সময়জ্ঞান হারিয়ে ফেলেছেন।
২) ফরহাদ মজহার তার ষ্টেটমেন্ট সুস্থ্য অবস্থায় দেননি। পুলিশি জেরার মুখে স্টেটমেন্ট দিতে বাধ্য হয়েছেন হসপিটালে ভর্তি হবার পরিবর্তে।
৩) একজন মানুষ যখন ভয়াবহ অবস্থার মধ্যে দিয়ে সময় পার করে- তখন তার জ্ঞানবুদ্ধি সীমিত হয়ে পরে। তিনি ঐ মুহুর্তে খুব সামান্য স্মৃতিই মনে রাখতে পারেন। এবং এজন্যই তিনি অন্য নামে টিকেট কাটলেও স্বল্পস্মৃতি থেকে অবচেতন মনে তার আসল মোবাইল নাম্বরটি দিয়েছেন। এবং যে ‘গফুর’ নামটা তিনি বলেছেন- সেটাও তার অবচেতন মনের গভীরে থাকা কোন নাম।
 
যাই হোক, এগুলি স্রেফ সম্ভবনাময় উত্তর হতে পারে। কিন্তু আসল বাস্তবতা অন্যখানে।
 
আর অাসল বাস্তবতা হলো- যমুনার ফুটেজ দিয়ে যেটা আরও বেশী বাস্তবিক হয়ে ধরা দেয় সেটা হলো, ফরহাদ মজহারকে দেশের কোন আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী গ্রেফতার করেনি।
 
কিন্তু তিনি অপহৃত হয়েছিলেন।
৭২ বছরের কোন বৃদ্ধ খেলার ছলে ঢাকা থেকে খুলনা চলে যাননি।
 
ফরহাদ মজহারকে আটক করেছিল ভারতীয় ‘র’।
‘র’ উদ্দেশ্য ছিল তাকে বর্ডার পার করে ভারতে নিয়ে যাওয়ায়।
 
কিন্তু দেশের আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী যখন তাকে উদ্ধার করতে মাঠে নামে এবং নিরুপায় হয়েই খুলনা পর্যন্ত গিয়ে- ‘র’ ফরহাদ মজহারকে চোখ খুলে দিয়ে নিজেরা পালিয়ে যায় সেই মাইক্রোবাসটি নিয়েই।
 
আর দীর্ঘ ১২/১৪ ঘন্টা চোখ বাঁধা অবস্থায় থেকে একজন মানুষ নিশ্চিত মৃত্যুমুখ থেকে ফিরে হতবিহ্ববল হয়ে উল্টা-পাল্টা করবে বা বলবে সেটাই স্বাভাবিক।
 
হাসিনা সরকার ভারতীয় ‘র’ কে বাঁচাতে এখনও নিত্যদিন নতুন নতুন নাটক সামনে আনবে সেটাও স্বাভাবিক। আর তাদের সহযোগীতার জন্য তো দেশের যমুনা, ৭১, চ্যানেল আইসহ আরও গোটা পঞ্চাশেক মিডিয়াতো রয়েছেই।
 
একজন মৃত্যুর মুখ থেকে বের হয়ে আসা মানুষ এদিক ওদিক হাঁটবে, রেষ্টুরেন্টে কিছু খাবার খাবে, অর্ডার করে ঘুমিয়ে যাবে, বা নিজেকে ‘সেফ’ রাখতে ভিন্ন নামে বাসের টিকেট কিনবে- এগুলিই স্বাভাবিক।
 
হাসিনা সরকার যে এখন শুধুই ‘র’র ক্রীড়ানক সেটাই বর্তমান পুলিশি পরিচালনার নাটকগুলি প্রমাণ করে দিচ্ছে।
 
ভারত ধ্বংস হোক।
ভারতীয় ‘র’ ধ্বংস হোক।
হাসিনা ধ্বংস হোক ওর বাবার মতোই।
 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *