কিং জর্জ মেডিকেল


ভারতের উত্তর প্রদেশের কিং জর্জ মেডিকেল (http://kgmu.org/) এর থাইরয়েড ও ব্রেষ্ট টিওমর এর বিশেষজ্ঞ এবং ভারত বর্ষের অত্যন্ত জনপ্রিয় চিকিৎসক ডা. আনন্দ মিশ্রা আমার বন্ধু। ভদ্রলোক আমার হাই ব্লাড প্রেশার এর কথা শুনে তার পরিচিত একজন ডাক্তার এর মোবাইল নাম্বার দিয়ে এবং সেই ডা. কাভিটা মিশ্রাকে ফোনে আমার কথা বলে দিলেন।
 
রবিবার ভারতবর্ষে সাপ্তাহিক ছুটির দিন। আমি ওদিন বিকেলেই কুম্ভু এক্সপ্রেস ট্রেনে হাওড়া ফিরবো। কাজেই ডা. কাভিটা (বাংলাদেশী বানান ও উচ্চারনে সেটা ‘কবিতা’) আমাকে তার নিজের বাসায় সকাল ১০টায় যেতে বললেন। আমি অটো নিয়ে তার ভিকাশনগর এর কুরশি রোডের বাসার সামনে থামলাম। বাসার গেটে দাড়িয়ে সাইনবোর্ড লক্ষ্য করলাম- তার ফরটি নাইন জেনারেশনই ডাক্তার।
 
ডা. কাভিটা চমৎকার বাংলায় আমাকে অবাক করে দিয়ে বললেন, ডা. আনন্দ আপনার কেমন বন্ধু? আমি তো ওইকেন্ডে রোগী দেখি না; কিন্তু আনন্দজি’র কথাতো ফেলতে পারি না। ওনার বাংলাটা- গ্রামারটাইপ বাংলা- ভাল লাগছিল না।
আমি তাকে হাসতে হাসতে বললাম, আপনার মুখে বাংলা শুনবো- ভাবিনি, আনন্দজি আমাকেও কিছুই বলেন নি। শুধু বললেন, তুমি তার কাছে যাও- সে তোমার রিয়েল ট্রিটমেন্ট দেবেন। এবং তুমি কি তোমার এতো চমৎকার বাংলা’র শানে নজুলটা আমাকে বলবে? তুমি কি কোলকাতায় পড়াশোনা করেছো?
 
এবার ডা. কাভিটা চমৎকার হাসি দিয়ে বললেন, না। কোলকাতায় আমি গিয়েছি ঠিকই কিন্তু আমার স্কুল কেটেছে মেঘালয়ের শিলং এ। তাই টুকটাক বাংলা বুঝি- কিন্তু ভাল বলতে পারি না।
 
এরপর আর কোন কথা না বলে ডা. কাভিটা সরাসরি আমার ট্রিটমেন্টের বিষয়ে মনোযোগী হলেন। আমার প্রব্লেম জানতে চাইলেন।
আমি বললাম, হাই ব্লাড প্রেসার যাচ্ছে। ব্লাড ক্লোষ্টারেলও হাই। তবে, এসব ছাড়িয়ে সবচে যেটা বড় সমস্যা- তা হলো, রাতে কোন ঘুম হয় না। ঢাকার একজন ডাক্তার আমাকে ব্লাড প্রেসার এর ওষুধ দিয়ে মাথার উত্তাপ কমিয়েছেন ঠিকই কিন্তু সারাক্ষণই মাথার মধ্যে এটা কেমন যেন অসস্তিকর যন্ত্রণা অনুভব করি। কোন ঘুমের ওষুধেই আমার কাজ হয় না। ডাক্তার আমাকে অতি শক্তিশালী ঘুমের ওষুধ মাইলাম সেভেন পয়েন্ট ফাইভ দিয়েছেন। ওটা ডিনারের আগে খেতে হয় এবং ডিনারের টেবিলেই আমি ঘুমিয়ে পরি। এবং রাতে অনেক সময়ই এবনরমাল বিহেব করি। এমনকি এক রাতে কাকে যেন ফোনও করেছি ঘুমের মধ্যে!
 
ডা. কাভিটা আমার প্রেশার মাপলেন, আরও কিসব করলেন। তারপর কাগজ কলম নিয়ে বসলেন। বললেন, তোমার প্রেসার আমি মাত্রায় রাখার ব্যবস্থাপত্র দিচ্ছি। মাথার যন্ত্রণা থাকবে না, একটা ওষুধ দিলাম- ওটা দিনে আধখানা খাবে। আর তুমি এবার আমাকে বল যে, ঠিক কয়টা থেকে কয়টা অবধি তুমি সাউন্ড স্লিপ ঘুমাতে চাও?
 
আমি ওনার কথায় খুবই আস্থা পেলাম। জবাবে বললাম, আমি খুবই খুশী হবো যদি তুমি আমার মাথার যন্ত্রণাটা বাদ দেবার ব্যবস্থাপত্র দিতে পার। আর আমি রাত ১টা থেকে ভোর ৭টা অবধি ঘুমাতে চাই।
 
ভদ্রমহিলা আমাকে একটা ওষুধ প্রেসক্রাইব করলেন এবং বললেন- শোন, সমস্যাটা তোমার ঘুমের না। সমস্যা হলো তোমার মানসিক চাপের। তুমি ব্যবসায় করো এবং প্রচুর পরিশ্রম করো কিন্তু আমার ধারণা তুমি মানসিক চাপমুক্ত নও। প্রচন্ড মানসিক প্রেসারে রয়েছো তুমি- যেটা আমি তোমার নেক্টট লক্ষ্নৌ ভিজিটে কয়েকটা টেষ্ট করলে কনফার্ম হব। আমি তোমার মানসিক চাপ কমাবার ব্যবস্থাপত্র দিচ্ছি। এতে তুমি দারুন ফল পাবে এবং সুন্দর ঘুম হবে। তুমি যে-ই টাইমে ঘুমুতে চাও তার ঠিক ৬ঘন্টা পূর্বে প্রতিদিন একটা করে ট্যাবলেট খাবে। ট্যাবলেট খাবার পর প্রতিদিন যাষ্ট কুড়ি মিনিট হাঁটবে এবং যথাসময়ে লাইট, টিভি অফ করে বেডে যাবে এবং তোমার ঘুম হবে।
 
তারপর গত ৮ বছর যাবৎ আমি সত্যিই সুন্দর ঘুমাতে পারছি। বাংলাদেশের সেই অতি বিখ্যাত ডাক্তারের মাইলাম ৭.৫ আর আমাকে সেবন করতে হয়নি। এবং তারপর থেকে আমি আমার কোন অসুখের জন্যই বাংলাদেশী কোন ডাক্তারের কাছে যেতাম না বা যাই নি।
 
ডা. কাভিটা, ডা. আনন্দ এবং ডা. এমএলভি ভাট, ভারতবর্ষের এই তিনজন ডাক্তারের কাছে শিখেছি- ওষুধ হলো একটা কোর্স এবং মূল ট্রিটমেন্টটা নিজেকে বুঝাতে হবে যে আমার কি অসুখ হয়েছে এবং কেন হয়েছে- সেজন্য কি করা উচিৎ! এটা আমি কোয়ান্টাম মেথডেও শিখেছি।
 
যাই হোক, ডা. কাভিটাকে নিয়ে আরও মজার মজার অভিজ্ঞতা সময় মতো আরও শেয়ার করবো। আমি মূলত এতটা ভূমিকা নিলাম আমেরিকার ট্রিটমেন্ট সম্পর্কে ধারণা দেবার জন্য।
 
২০১৩ সালের দিকে জিয়া’য় আমার আমদানী করা কিছু টেলিকম আইটেম কাষ্টমস কর্তৃপক্ষ ঘুষ খাবার জন্য আটকে রেখেছে- সিএন্ডএফও বাড়তি টাকার জন্য চাপ দিচ্ছে। আমি নিজেই একদিন গেলাম সিভিল এভিয়েশনের কাষ্টমসে। মুন্নিসাহার ভাই সুধির সাহা’র হাতে আমার ফাইল। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায়- হিন্দু মানুষ; বিশাল দাপট তার। আমিও জায়গা মতো ‘চোদন’ দেয়া জানি; দিলামও। কাজ হল (দুঃক্ষিত বাজে ‘শব্দ’টি ব্যবহারের জন্য- কিন্তু বাংলাদেশে বসবাস করলে ওই শব্দটি যে অতি প্রয়োজনীয়)।
 
বাইরে বের হয়ে ড্রাইভারকে ফোন করার মুহুর্তে লক্ষ্য করলাম এক ব্যক্তি ওজন, উচ্চতা, প্রেসার এবং ডায়াবেটিক মাপার যন্ত্রপাতি নিয়ে বসে আছে; কাষ্টমার নেই। আমার মায়া হল। এগিয়ে গেলাম- সবকিছু মাপালাম। সবকিছু স্বাভাবিক। জীবনে প্রথমবার ডায়াবেটিক মাপালাম, ৪.৫; খুবই নরমাল।
 
২০১৪র শেষে চলে আসলাম আমেরিকায়।
আসার সময় মাস তিনেক চলার মতো ওষুধ সাথে করে নিয়ে আসলাম। আমি মাথার যন্ত্রণা উপশমের জন্য যে ওষুধটা খাই ওটার নাম ‘এমিটিপটাইলিন ২৫এমজি’; ঢাকায় ওর ১০টা ট্যাবলেটের দাম ৭ টাকা। একদিন নিউ ইয়র্কের একটা ফার্মেসীতে গিয়ে ওই ওষুধটির মূল্য জিজ্ঞেস করলাম। সেলস ম্যান বললো- এখানে মাসিক হিসাবে ওষুধের প্যাকেট হয়; ৩০টা মূল্য ২৮ ডলার ট্যাক্স সহ। তারমানে ১০৭% বেশী মূল্য! এবার ওষুধের মূল্য শুনেই আমার মাথায় সেই যন্ত্রণা শুরু হল। আমার সদ্যপরিচিত একজনের মাধ্যমে (সামিয়া আপু ও তার হাজবেন্ড সিমুল মাহাবুব ভাই) ৬ মাসের ওষুধ আনিয়ে নিলাম- যন্ত্রণা কমলো। কিন্তু এভাবে তো থাকা যাবে না!
 
নিউ ইয়র্কের চিকিৎসা সম্পর্কে খোঁজ-খবর নেয়া শুরু করলাম।
পরিচিত বাংলাদেশী ভাইদের কাছে খোঁজ-খবরের এক পর্যায়ে বুঝতে পারলাম ‘গরুগুলি’ শুধু বাংলাদেশেই বসবাস করে না; বাংলাদেশের সেই ‘গরুগুলি’ আমেরিকায় এসেও বলদই রয়ে গেছে- এদের এখানেও কোন উন্নতি হয়নি। এদের এক কথা- এদেশে সোসাল সিকিউরিটি ছাড়া কোন ট্রিটমেন্ট করা যাবে না। গ্রীনকার্ড ছাড়া কিছুই হবে না। তোমরা টুরিষ্ট ভিসায় এসেছো- ভিসা শেষে চলে যাও।
 
২টি বিষয় ভেবে পেলাম। প্রথমতঃ বাংলাদেশ থেকে ৮৫% লোকই আমেরিকায় এসেছে ডিভি লটারী পেয়ে- কপাল গুনে অথবা তাদের আমেরিকায় থাকা আত্মীয়-স্বজনদের ফ্যামেলি এসেছে সরাসরি গ্রীনকার্ড নিয়ে মাইগ্রেন্ট হয়ে। এরা জীবনে কোনদিন ভারতও যায়নি। এরা আর জানবে কি?
এরা জীবনে ঢাকা শহরেও অাসেনি কিন্তু সেই চাপাইনবাবগঞ্জ বা সুনামগঞ্জ থেকে সরাসরি চলে এসেছে জেএফকে এয়ারপোর্টে। এরা বাংলা ভাষাটাও ঠিক-ঠাক বলতে পারে না; ইংলিশ তো অনেক দূরের হিসাব! অদ্ভুৎ কিসব হিব্রু ভাষায় কথা বলে, সবচে বেশী বুদ্ধিমানটি চালায় ইয়োলো ক্যাব- সপ্তাহে আয় করে ১৫০০ ডলার; মাসে ৬ হাজার। ঢাকায় আমার ড্রাইভার যেই বাসায় থাকে সেই মাপের একটি বাসায় ১২০০ থেকে ১৪০০ ডলারে পুরো পরিবার নিয়ে বসবাস করে এবং মাস শেষে ৪০০০ ডলার নেট আয় করে। এতো টাকা খরচ করার জায়গাও খুঁজে পায় না। কি করবে কি করবে ভেবে ভেবে গঠন করে বিভিন্ন সমিতি। গঠন করে ছাত্রদল, যুবদল, বিএনপি, আওয়ামী লীগ, যুব লীগ, শ্রমিক লীগ, ছাত্রলীগ ইত্যাদির নিউ ইয়র্ক শাখা, লস এজ্ঞলেস শাখা, মিয়ামী শাখা। কোনটা আবার ৪টা ৫টা করে উপদল রয়েছে। ৪/৫জন মিলে জ্যাকসন হাইটস এর কোন একটি রেষ্টুরেন্টে কিছু খাবার দাবার খেয়ে নিউ ইয়র্ক থেকে প্রকাশিত ২০টি বাংলা সাপ্তাহিকে দৌড়ায় নিজের ছবিসহ একটা প্রেসনোট দিতে। তনু হত্যার প্রতিবাদ করে জ্যাকসন হাইটসসে ব্যানার ঝুলিয়ে। আর যারা রাজনীতি করতে পারে না- এরা বানায় থানা সমিতি, গ্রাম সমিতি, মহাল্লা সমিতি, উপজেলা সমিতি। সেটা আবার বছর খানেকের মধ্যেই ভেংগে উপ-সমিতি হয়ে যায়। এরাও ছোট রেষ্টুরেন্টে মিটিং করে ছবি তুলে এবং সাপ্তাহিকের পেছনে ছুটে ছবি ছাপাতে। এসব পত্রিকা কেউ পড়ে না; যাদের নিজেদের ছবি ছাপা হয়- তারাই দাড়িয়ে দাড়িয়ে নিজেদের ছবি দেখে মুগ্ধ হয়। ইংলিশ বলতে পারে না, বাংলাও না। এই হলো বাংলাদেশ থেকে আমেরিকায় আগত মানুষদের চিত্র। হাজার দুয়েক সমিতি রয়েছে নিউ ইয়র্কেই।
আর এদের অনেকেই দেখি বসে বসে ‘বেনিফিট’ (সরকারী ভিক্ষা) খায়।এদের কাছ থেকে কোন তথ্য পাওয়া যাবে- সেটা ভাবনাটাই ছিল ভুল।
 
কিন্তু আমি জানতাম, আমেরিকা হলো ইমিগ্রান্টদের দেশ। বিশ্ববাসীর দেশ। বিশেষতঃ নিউ ইয়র্ক হলো সারা পৃথিবীর মানুষের দেশ। স্ট্যাচু অব লিবার্টি- সেই কথা তুলে ধরেই দাড়িয়ে আছে- শত শত বছর। আর সেখানে আমি ট্রিটমেন্ট পাবো না? এটা কোন কথা হলো?
 
আমি থেমে থাকার মানুষ নই।
খবর আমাকে বের করতেই হবে। আমি জানি আমার নিজেকে। আমি পারবোই। এবং পারলামও।
হ্যাঁ। ‘নিউ ইয়র্কে বসবাসরত প্রতিটি নিন্ম আয়ের মানুষই সম্পূর্ণ ফ্রি ট্রিটমেন্ট পাবে’ (বার্ষিক ২৭,০০০ হাজার ডলারের নীচে যাদের পারিবারিক আয় রয়েছে)- এটা নিউ ইয়র্ক ষ্টেটের একটা আইন। তার স্ট্যাটাস জানতে চাওয়া হবে না। মিলিয়ন ডলার বিল হলেও সেটা ষ্টেট গর্ভার্ণমেন্ট বুঝবে। গর্ভামেন্টের দায়িত্ব প্রতিটি নিউ ইয়র্কারের স্বাস্থ্য ও চিকিৎসা নিশ্চিত করা।
 
হ্যাঁ, আমি নিউ ইয়র্ক ষ্টেটের হেলথ ডিপার্টমেন্ট থেকে ‘বেনিফিট কার্ড’ পেয়ে গেলাম। সেই সাথে পেলাম- ওয়েল কেয়ার ইন্সুরেন্স কার্ডও। নিউ ইয়র্কে দাঁতের চিকিৎসা সবচে ব্যয় বহুল। সেই ব্যয়বহুল ট্রিটমেন্টেরও ফ্রি সাপোর্ট হিসাবে ডেন্টাল কার্ডও পেয়ে গেলাম।
এবং শুধু তাই-ই নয়। গত দেড় বছরে আমি প্রায় দেড়শত আন-ডকুমেন্টেড (স্ট্যাটাস, ভিসা বা অবৈধ) বাংলাদেশী, নেপালী ও হিস্পানিকের ফ্রি ট্রিটমেন্টের জন্য ব্যবস্থা করে দিয়েছি। এখন ঢাকার মতো- নিউ ইয়র্কেও আমার নেটওয়ার্ক আমি তৈরী করে নিতে পারছি ডে-বাই-ডে।
 
কিন্তু পড়েছি আরেক মজার বিপদে।
ও, হ্যাঁ। আমেকিরায় চিকিৎসকরা নিজ নামের আগে ‘ডাক্তার’ লিখতে পারেন না। ডক্টর বিশেষনটি শুধুমাত্র পিএইচডি প্রাপ্তদের জন্যই সংরক্ষিত। এখানকার চিকিৎসকগণ নিজ নামের শেষে ‘এমডি’ লিখে থাকেন।
 
আগেই বলেছি আমেরিকার প্রতিটি মানুষই এক একজন মানুষ। এবং এখানকার প্রত্যেকেরই একজন করে ‘পিসিবি’ বা প্রাইমেরী ডাক্তার থাকেন। আমার পিসিবি হলেন মোহাম্মদ হোসেন- (এমরান ভাই) যিনি বিখ্যাত লং অ্যাইল্যান্ড হসপিটালের একজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক এবং বর্তমানে আমার খুব ভালো বন্ধুও।
 
আমারিকায় প্রথম ট্রিটমেন্টেই ধরা পরলো আমার ডায়াবেটিক ৩৮০। মানে বাংলাদেশের হিসাবে প্রায় ২১; যা অনেক বেশী। আমার পরিবারের হিষ্ট্রিতেও রয়েছে ডায়াবেটিক; সুতরাং আমার অবস্থা খুবই খারাপ।
 
গতকাল আমার একটা টেষ্ট ছিল। এখানকার আরেকজন জনপ্রিয় হার্টের স্পেশালিস্ট মি. হামিদি (পাকিস্তানী আমেরিকান) আমার হার্টের খোঁজ-খবর রাখেন। তিনি সন্দেহ করছিলেন আমার হার্টে ব্লক আছে। কিন্তু আমি বিশ্বাস করি- কোন ব্লক নেই। তারপরও উনি বিশেষজ্ঞ। তার কথাই উপরে। গতমাসে আমার শরীরে দুই দুইবার ‘এটম বোমা’ ঢুকিয়ে দিয়ে কি এক পারমানবিক না এটমিক টেষ্ট করিয়েও ওনি শান্তি পেলেন না। অবশেষে সিদ্ধান্ত নিলেন- আমার হার্টের ব্লক উনি বের করে ছারবেন-ই। প্রয়োজনে কিডনীর সমস্যাও বের করবেন! নাছারবান্দা!
 
নিউ ইয়র্ক এর বিখ্যাত হসপিটাল ‘নিউ ইয়র্ক প্রিসবাইটিরিন- কুইন্স’ এ আমার স্কাজুয়াল করিয়ে দিলেন তার এসিষ্টেট- গায়ানার ইন্ডিয়ান ও কালো মিলিয়ে আমেরিকান একটা মেয়ে।
 
গত ৩দিন যাবৎ আমাকে ফোনের পর ফোন করে পাগল করে যাচ্ছে হসপিটাল থেকে- আমি যেন শুক্রবার ১২টার মধ্যেই হসপিটালে উপস্থিত থাকি। গাড়ী ড্রাইভ করতে পারবো না। ‘প্রিপারেশন’ মনে করিয়ে দিতেও তারা ভুলছে না।
বাধ্য, অনুগত ছেলের মতো ঠিক ১২টায় উপস্থিত হলাম, লাল রঙএর হসপিটালের রিসিপশনে। আমার নাম ও জন্ম তারিখ বলার পর আমাকে পেছনের রেজিষ্ট্রেশন রুমে পাঠিয়ে দেয়া হল। সেখানে ঢুকে দেখলাম ব্লাক মেয়েটি আমার ফাইল হাতে নিয়ে বসে আসে। সে, আগেই আমার রেজিষ্ট্রেশন কমপ্লিট করিয়ে রেখেছে- শুধুমাত্র আমার সাইন লাগবে। দিলাম।
 
আমাকে বলল, তোমাকে নিউ ইয়র্ক হসপিটালে ভর্তি করা হল।
আমি প্রশ্ন করলাম, মানে? কিসের ভর্তি? আমি কি রোগী না কি?
মেয়েটি হেসে দিয়ে বলল, মি. হামিদি তো তাই ভাবেন। তবে, তুমি স্বাধীন- মন চাইলে তুমি যখন খুশী চলে যেত পারো- কোন সমস্যা নেই।
এরপর আমাকে দোতালায় টুওফোর রুমে যেতে বলল। গেলাম।
 
আরেকটি মেয়ে এসে জিজ্ঞেস করলো আমি কি খেতে চাই? ‘টোনা’ না কি ‘টার্কি’? আমি টোনা চাইলাম- এটা বেশ মজাদার খাবার। রুটির ভেতের প্রচুর সালাদ ও টুনা মাছ দেয়া থাকে। সংগে জিনজার ড্রিংকস।
 
একজন নার্স এসে নিজের পরিচয় দিল। আমাকে সাথে করে ভেতরে নিয়ে গেল। বলল, তোমাকে প্রায় ৩/৪ ঘন্টা থাকতে হবে। তুমি কি গাড়ী ড্রাইভ করে আসনি তো?
আমি বললাম, না।
বলল, ভাল করেছো।
তোমার টেষ্ট শেষ হলে আরও চার ঘন্টা এখানে তোমাকে থাকতে হবে- আমরা তোমাকে ৪ ঘন্টার আগে ছাড়তে পারবো না। আর কেউ যদি তোমাকে পিক করতে আসে- তাহলে ২ঘন্টা পর তোমাকে ছাড়া যেতে পারে।
 
চাইনিজ এক মহিলা আসলেন। নিজের পরিচয় দিলেন- ওনি আরেকজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক। আমাকে বললেন, হাই, হাও আর উও ডুয়িং?
আমি জবাবে বললাম, নি হাও।
ভদ্র মহিলা হেসে দিলেন। তুমি কি চায়নার সাথে ব্যবসা করো?
আমি বললাম, হ্যা। তোমার বাড়ী কোথায়?
স্যাংহাই। তুমি গেছ?
আমি হেসে দিলাম। বললাম, প্রায় ১৬/১৭ বার গেছি। আমার সবচে প্রিয় শহর। আমি খুব পছন্দ করি স্যাংহাইকে।
ভদ্রমহিলা খুব অভিভত হলেন। আরও অনেক কথা বললেন। এবং শেষটায় বললেন, শোন তোমার এই টেষ্টে কোন কষ্ট হবে না। কিন্তু সামান্য রিক্স রয়েছে?
আমি বললাম, কি রিস্ক? মারা যাবার সম্ভাবনা রয়েছে কি? আই এম রেডী?
ভদ্রমহিলা হেসে দিলেন, ১% চান্স রয়েছে। তবুও আমরা খুবই সাবধান। এবং তোমাকে এই ঝুকিটুকু মেনে নিতে হবে এবং এখানে সিগ্নেচার করতে হবে। আর যদি সিগ্নেচার না করতে চাও তাহলে বাড়ী চলে যেতে পার।
আমি হাসিমুখে রিস্ক পেপারে সিগ্নেচার দিয়ে দিলাম। এবং বললাম, আমি মারা গেলে আমার বডিটা নিউ ইয়র্ক হেলথ ডিপার্টমেন্টকে দিয়ে দিও। আমি আগেই উইল করে দিয়ে রেখেছি- বলতে বলতে আমার সিটি আইডি কার্ডটি দেখালাম।
ভদ্র মহিলা মৃদু হাসলেন।
 
না। আমি গতকাল মারা যায় নি। তবে বদমাইশগুলি আমাকে কষ্ট দিয়েছে। পেট ফুটো করে কিসব যেন করেছে। কালও পারমানবিক বোমা-টোমা ঢুকেয়ে দিয়েছে শরীরের ভিতর। পেট ফুটো করার আগেই আমি বুঝে ফেলেছিলাম- কিছু একটা করবে। ভয়ংকর কিছু। কিন্তু ওরা স্বীকার করলো না। সুন্দরী একটা নার্স ছিল, ওকে বললাম- আমাকে কি কোন কষ্ট সহ্য করতে হবে? তোমাদের আয়োজন তো খুবই খারাপ- এতো অস্ত্রপাতি কেন? এটম বোমাও তো ঢুকিয়ে দিয়েছো?
 
মেয়েটি উচ্চস্বরে হেসে দিল। বলল, তোমাকে কিছুই করবো না। তোমাকে শুধু একটা হালকা ঘুমের ইনজেকশন দেব। তোমার একটু মাতাল মাতাল লাগতে পারে।
হ্যা। ইনকেজশন দিল, ঘুমের মতোই লাগলো কিন্তু মনে হলো ৫/৬ পেগ ভদকা খেলাম মাত্র। তারপর কি করছে জানি না।
শুধু আবিস্কার করলাম, পেটে একটা ছোট ব্যান্ডেজ এবং চিনচিনিয়ে ব্যাথা করছে।
 
ডা. হামিদি আমার কাছে আসলেন। হেসে বললেন, তুমি কেমন আছো?
আমি বললাম, তোমার খবর বল, তুমি কি সাকসেসফুল না কি আজও ব্যর্থ?
 
খুবই স্মার্ট ভদ্রলোক মি হামিদি মুচকি হেসে বললেন, আমি ব্যর্থ। তোমার কোন সমস্যা নেই। তোমার হার্ট ও কিডনী ১০০% প্রপারলি কাজ করে যাচ্ছে। বাট, প্লিজ নো ফুড আফটার সেভেন পিএম।
 
আমি বললাম, হবে না। আমি মূলতঃ এক বেলাই খাই এবং সেটা রাত ১০টায়। এন্ড টেন ইজ অলওয়েজ এ্যাট আপফার সেভেন।
সুন্দরী সাদা নার্স, হামিদি, আমি এবং আরেকজন সহায়তাকারী সবাই এক সংগে হেসে দিলাম। তখনও আমার ঘুম নামক ‘ভদকা’র নেশা পুরোপুরি কাটেনি!
 
বিদায়ের মুহূর্তে নার্স জন একটি কাগজ ধরিয়ে দিল। সেখানে আজকের এটেনডেন্ট সব নার্সের নাম লেখা রয়েছে। আমার দায়িত্বে থাকা নার্সদের নাম গোল করে দাগ দেয়। জন বলল, আমি হলাম জন। আর এরাও তোমার সংগে ছিল।
সার্ভেতে আমাদের সম্পর্কে ভাল মতামত দিলে আমি খুশী হব। আমি তাকে অভয় দিলাম।