তৃতীয় সূত্র


স্যার আইজ্যাক নিউটন আমার ‘সবচে প্রিয় ও সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ মানুষদের লিষ্টে’র ঠিক ৩য় অবস্থানে রয়েছেন।

মুহাম্মদ (সা.) এবং উমর (রা.) এর পরের অবস্থানটি আমি নিউটন এর জন্য রাখি।
আপেল খাওয়াকে কেন্দ্র করে বাংলাদেশের প্রায় সবাই স্যার আইজ্যাক নিউটন সাহেব’কে চিনে। আমি আপেল প্রসংগে কোন কথা-ই বলবো না।
আপেল প্রসংগে নিউটনের পরে যা যা ‘বলার বা করার’ তার সবটাই তো করে গেছেন ‘ষ্টিভ জবস্’। বেচারা নিউটন বেঁচে থাকলে নির্ঘাত আপেল এর প্রসংগ বাদ দিয়ে কমলা বা পেয়ারা’র কথা বলতেন।
আপেল নিয়ে কথা বলার মতো ‘অত’ যোগ্যতা আমার কোথায়?
আমি বরং তার তৃতীয় সূত্র নিয়ে কিছু একটা বলার চেষ্টা করি।
বাংলাদেশের পুলিশ এই মুহুর্তে বর্তমান বিশ্বের সবচে ভয়ংকর সন্ত্রাসী সংগঠন। পুলিশ পারে না বা করে না- এমন কোন কাজ নাই; অন্তত বাংলাদেশ নামক ভুখন্ডটিতে।
হুম্মাম কাদের চৌধুরী’র কোন খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না। ডিবি পুলিশ তাকে তুলে নিয়ে গেছে, পুলিশ কোন তথ্য দিচ্ছে না, পরিবারের কোন জিডিও নিচ্ছে না। তার বাবাকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে হত্যা করা হয়েছে। তাকে গুম করে ফেলা হবে না- এই কথা কে বলবে?
সালাউদ্দিন আহমেদকে উত্তরা থেকে তুলে নেয়া হলো। অনেক মাস পরে ভিসা-পাসপোর্ট ছাড়াই উম্মাদ অবস্থায় পাওয়া গেল- ভারতের মেঘালয় প্রদেশের রাজধানী শহর শিলংএ। ওনার কপালটাও মনে হয় ভালই ছিল।
বাংলাদেশ ব্যাংকের টাকা হ্যাকিং এর বিষয়ে তদন্ত করতে যেয়ে গুম হয়ে গেল তানভীর জোহা নামক আইটি বিশেষজ্ঞ; পরে উত্তরায় নাকি তাকে পাওয়াও গেল। নিতান্তই রাজ কপাল ছিল তানভীর জোহার।
মগবাজারের চৌধুরী আলম সেই কত কত বছর আগে গুম হয়েছে, বিএনপি নেতা ইলিয়াস আলীর তো কোন খবরই নাই।
মীর কাশেম আলী কারাগারে ফাঁসির দিন গুনছেন।
মৃত্যুকালে ৬০ বছর বয়সের কাদের মোল্লা’কে ৪৫ বছর আগের করা (সেভেনটি ওয়ানে ৪২ বছর বয়সের কসাই কাদের নামের সংগে মিলিয়ে; বিচারকের রায় সঠিক হয়ে থাকলে ৪২+৪৫ = ৮৭ বছর বয়স হবার কথা কাদের মোল্লার) ফাঁসি দিয়ে মেরে ফেলা হলো।
‘আওয়ামী লীগ’ আর তার অংগ সংগঠন ‘বিচারপতি লীগ’ সংগে ‘পুলিশ লীগ’- বর্তমান পৃথিবীর আতংক। একই সংগে কম যায় না তাদেরই নবআবিষ্কৃত ‘জংগী লীগ’ যা ‘ছাত্র লীগ’ এর গোপন সংস্করণ।
গত দুই, আড়াই বছরে হাজার হাজার ভিন্নমতের মানুষকে প্রকাশ্যে রাজপথে গুলি করে হত্যা করেছে পুলিশ। দেশে কোন বিচার নেই; বিচারপতিরা কোর্টে বসে হাততালি দিচ্ছে!
সম্পূর্ণ বৈধ ছাত্র সংগঠন ছাত্র শিবির এর নাম শোনা মাত্র- কোন মামলা বা কারণ ছাড়াই গ্রেফতার করে অমানুষিক নির্যাতন ও শেষে খুন করা হচ্ছে দেশের প্রতিভাবান, সৎ, নামাজী ও আদর্শবান ছেলেদের।
কোন বিচারপতি পর্যন্ত একটা কথাও বলছে না- এসব বেআইনী অসভ্যতার বিরুদ্ধে।
এসব বিচারপতিদের টেবিলে, ওদের বুকে লাথি মারি আমি।
আজ অবধি একজন বিচারপতিও (তাদের ন্যূনতম মানবতা, সভ্যতা ও সততা এবং বোধদয় থাকলে) একটা টু শব্দটিও করেনি এসব হত্যাকান্ডের বিরুদ্ধে। কথায় কথায় মানুষকে ক্রস ফায়ারে দেয়া হচ্ছে। কথায় কথায় বন্দুক যুদ্ধের নামে আসামীকে বিচারের সুযোগ না দিয়ে হত্যা করা হচ্ছে।
কোন একজন আসামীকেও বিচারের কাঠগড়ায় দাড়ানোর সুযোগ দেয়া হচ্ছে না।
এটা কি আসলেই কোন মানুষের দেশ?
ওই ভুখন্ডে কি কোন মানুষ সত্যি সত্যিই বসবাস করে?
কুকুর বিড়াল’কেও তো আরেকটু মানবতা দেখানো হয়! বাংলাদেশে কি হচ্ছে এসব?
জংগী হামলায় মানুষ মারা যাচ্ছে।
সেই জংগীদের ধরে তাদের কাছ থেকে কোন তথ্য আদায় না করে, মূল হোতাদের না আটক করে, বিচারের কোন সুযোগ না দিয়ে- সরাসরি গুলি করে হত্যা করা হচ্ছে।
আর বাংলাদেশের বিচারপতিরা বসে বসে আংগুল চুষছে?
পৃথিবীর ইতিহাসে এরকম অসভ্য, জানোয়ারের প্রতিচ্ছবিওয়ালা কোন বিচারপতি আছে? আমার জানা নেই।
বলছিলাম হুম্মাম কাদের চৌধুরী’র কথা।
দেখা যাবে তাকে এর মধ্যেই হয়তো হত্যা করা হয়েছে বা গুম করে ফেলা হয়েছে- পাওয়া যাবে না তাকে আর কোন দিনও।
শোনা যাচ্ছে মেজর জিয়া এবং তামিম চৌধুরী’কেও নাকি সামনে আনা হচ্ছে। দীর্ঘদিন মেজর জিয়া পুলিশের হাতে আটক। নতুন কোন খেলা হবে নিশ্চয়ই।
শুনছি নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষক হাসনাত করিমকে গুলশান হামলার অন্যতম পরিচালক বা খলনায়ক বানাতে তৎপর হয়ে উঠেছে পুলিশ লীগ।
ঠিক আছে, হাসনাত করিম যদি গুলশাল হামলার অন্যতম খলনায়কই হয়- তাকে রিমান্ডে নিয়ে তার কাছ থেকে তথ্য বের করে জাতির সামনে তুলে ধরা হোক, তার উপযুক্ত বিচার হোক।
কিন্তু এসব তো হাসিনার বাংলাদেশে হবে না।
তাকেও ক্রস ফায়ারে হত্যা করা হবে।
আর, সব কিছুর মূলেই যে কারণ ঐ একটাই। সবই ভারতীয় ষঢ়যন্ত্র। সবই হাসিনাকে আজীবন ক্ষমতায় রাখার পরিকল্পনা। ঠিক ওর বাবা শেখ মুজিবের মতোই। ষ্টাইলও অনেকটা একই।
দেশে গণতন্ত্র হত্যা করা হয়েছে।
মানবতা হারিয়ে গেছে।
কোন আসামীকে ধরতে না পারলে তার নির্দোষ পরিবারকে হয়রানী করা হচ্ছে।
এভাবেই কি চলবে?
তাহলে নিউটনের তৃতীয় সূত্রের কি হবে?
নিউটনের কোনও সূত্র-তো আজ অবধি ভূল প্রমাণিত হয়নি।
নাসা পর্যন্ত নিউটনের সূত্র-বলেই আজ মহাশূন্যে রাজত্ব চালিয়ে যাচ্ছে। নিউটনের সূত্রের বাইরে তো কিছু হয় বলে আমার অন্তত জানা নেই।
হাসিনা-পুলিশ-বিচারপতি। একই সূত্রে গাঁথা।
Newton’s Third Law of Motion:
For every action, there is an equal and opposite reaction.
প্রতিটি ক্রিয়া’র ই একটি সমান ও বিপরীত প্রতিক্রিয়া রয়েছে।
হাসিনা-পুলিশ-বিচারপতি।
এরা মানুষ মারছে। মানুষ হত্যা করছে। ভিন্নমত দমনের নামে যা খুশী তাই করছে।
হাসিনা সারাজীবন ক্ষমতা কুক্ষিগত রাখতে ভারতের অংগ রাজ্যের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে।
ফেসবুকে ইদানিং বেশ কিছু পোষ্টিং দেখতেছি।
পুলিশের বড়কর্তাদের (শহিদ-বেনজীর-মনিরুল) স্ত্রী-পুত্র-কন্যাদের ছবি, ঠিকানা প্রকাশ করা হচ্ছে। বিচারপতিদেরও তো স্ত্রী-পুত্র-কন্যা থাকার কথা। তাদেরও ছবি, ঠিকানা নিশ্চয়ই কোথাও না কোথাও রয়েছে।
দেশে কোন আইন কাজ করছে না। হাসিনা কোন আইন মানছে না- যা মন চায় তা করে যাচ্ছে। বিচারপতিরা কোন আইন মানছে না। পুলিশ কোন আইন মানছেন।
– তাহলে সাধারণ ‘ক্ষতিগ্রস্থ মানুষ’ কেন আইন মানবে?
যে মানুষগুলিকে বিনা বিচারে গুলি করে মেরে ফেলা হয়েছে, গুম করা হয়েছে বা হচ্ছে, যাদের আত্মীয়-স্বজন’কে বিনা কারণে হয়রানী করা হয়েছে; এগুলিরও তো প্রতিক্রিয়া হওয়ার কথা।
মানুষের দেয়ালে যে পিঠ ঠেকে গেছে- সেটা কি হাসিনার একবারও মনে হচ্ছে না!
এখনই যদি নিউটনের তৃতীয় সূত্র কাজ করা শুরু করে দেয়! তখন কি হবে?
নিউটন যদি আজ বেঁচে থাকতেন- তাহলে বাংলাদেশ পর্যালোচনা করে কি তার সূত্র বদলাতেন? আমার তো তা মনে হয় না!
দেশে কি তাহলে ভয়ংকর কোন গৃহযুদ্ধের দিকে চলে যাবে? হাসিনা কি তাহলে তার বাবার মতোই দেশটাকে ধ্বংস না করে ছাড়বে না?
নিউটন ভদ্রলোকের সূত্রতো ব্যক্তি বা স্থান বিশেষের জন্য নয়; সবার জন্যই সমান।
For every action, there is an equal and opposite reaction.

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *