ভারতীয় হাজার টাকার নোট!


বিভিন্ন কাজে জীবনে অসংখ্যবার ভারত ভ্রমণ করেছি।
সত্যিই অসংখ্য বার।
 
আমি সবসময় ক্যাশ ডলার নিয়ে যেতাম। কোলকাতায় ভাল রেট পাওয়া যেত।
১৯১৭ সালে ১ ইন্ডিয়ান রুপি’তে ১৩ ইউএস ডলার পাওয়া যেত; ওটা বৃটিশ ইন্ডিয়ার সময়।
আমি যখন প্রথমবার ইন্ডিয়ায় যাই তখন যদ্দুর মনে পরে ১ ডলারে পাওয়া যেত ৩০ টাকা। এরপর বাড়তে বাড়তে এখন ৬৫ ভারতীয় টাকায় রেট উঠেছে।
 
ভারতবর্ষে আমার কোন আত্মীয়-স্বজন নেই।
পশ্চিম বঙ্গের বাঙালীদের মধ্যে আমার পরিচিত কোন সৎ মানুষ নেই- সকলেই টাওট প্রকৃতির। কাজেই কারো সঙগেই সেভাবে ঘনিষ্ঠ হতাম না।
অবশ্য ওয়েষ্ট বেঙ্গলের বাইরে দিল্লী, লক্ষ্নৌ, মুম্বাই বা আগরতলাতে আমার অসংখ্য ভাল বন্ধু রয়েছে- যাদের সততা প্রশ্নাতীত।
 
ধরুন আমি দিল্লীতে গেলাম।
পাহাড়গঞ্জে হোটেল ভাড়া বেশ চিপ। ৬০০ থেকে ৮০০ টাকার মধ্যেই ভাল মানের এসি রুম পাওয়া যায় ওখানে।
 
সব কাজ শেষ; দেশে ফিরে আসবো। তখন আমার পকেটে ক্যাশ ১০ হাজার টাকা রয়েছে।
বর্তমান সাম্প্রদায়িক দল বিজেপির নেতা চরম মৌলবাদী প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ২/৩ দিন আগে হঠাৎ করেই ভারতের ৫০০ টাকা এবং ১০০০ টাকার নোট নিষিদ্ধ ঘোষনা করেছেন।
 
একই সংগে দেশের সকল এটিএম মেশিনও বন্ধ বেশ কয়েকদিন।
ব্যাংক খুলেছে ঘোষণার ৩ দিন পর। আমি সবসময় হাজার টাকার নোট সংগে রাখতাম। বহনে সুবিধার জন্য।
 
কিন্তু হঠাৎ মৌলবাদী প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী কোন আগাম সতর্কবার্তা না দিয়েই দেশের সকল ৫০০ এবং হাজার টাকার নোট নিষিদ্ধ ঘোষণা করলেন। সকল এটিএম বন্ধূ।
 
আমি কি খেয়ে বেঁচে থাকতাম এই কয়দিন?
আমি হোটেল ভাড়াটা হয়তো বা আমার ক্রেডিট কার্ড দিয়ে বিল শোধ করতে পারতাম কিন্তু ইন্ডিয়ানরা আমরাকে টাকা ছাড়া খাওয়াবে- এই চিন্তাটা করাও পাপ।
 
দেশে ফিরতাম কিভাবে?
 
আমি সত্যিই ভাবতে পারছি না।
নরেন্দ্র মোদী ব্যাংকগুলিকে নির্দেশনা দিয়েছে শুধুমাত্র ভারতীয় ফটো আইডি উপস্থাপন সাপেক্ষে তাদের ৫০০ ও হাজার টাকার নোটগুলি ব্যাংক থেকে চেঞ্জ করে নিতে পারবে।
 
কিন্তু যারা ফরেনার ভিজিটর- তাদের বিষয়ে কোন নির্দেশনা দেয়া হয়নি। ব্যাংকগুলি তাদের কোন সহায়তা করছে না।
 
ভারতবর্ষে ১৩০ কোটি মানুষ বসবাস করে।
১৩০ কোটি।
 
১৩০ কোটি মানুষ না হয় নিজেদের দেশ কোন ভাবে দুই চারদিন কষ্ট করে চালিয়ে নিল। কিন্তু ভারতে সারা পৃথিবী থেকে লক্ষ লক্ষ টুরিষ্ট নিয়মিত ভ্রমণে যায়।
 
এই ভিনদেশী মানুষগুলির কি হচ্ছে?
কি হবে তাদের?
 
এই মুহুর্তে অসংখ্য বাংলাদেশী চিকিৎসার জন্য বা ভ্রমণে ভারত বর্ষের নানা প্রান্তে রয়েছে- কি হচ্ছে এখন এ মানুষগুলির?
কি খাচেছ ওরা?
কোথায় টাকা পাচ্ছে রোগীর চিকিৎসার জন্য?
উহ আমি ভাবতে পারছি না!
আমি ঐ মানুষগুলির কষ্টকর সময়ের কথা সত্যিই ভাবতে পারছি না।
কারণ আমি তো জানি- বিদেশের বাড়ীতে কোথাও সাহায্য পাওয়া সম্ভব নয়।
 
তার-উপর ভারত! ওরা নিজেরাই তো খাবার পায় না!
ভারতীয়দের মতো কৃপন জাতি পৃথিবীতে আমি কিন্তু দ্বিতীয়টি খুঁজে পাইনি।
 
নরেন্দ্র মোদীকে আমি যথেষ্ঠ বুদ্ধিমান হিসাবেই জানতাম।
তার বুদ্ধিতে আমার শ্রদ্ধা ছিল।
 
কট্টর মৌলবাদী মানুষগুলি আসলেই সভ্য হতে পারে না।
 
ভারতে আমি বহু বহু বার ভিজিট করেছি।
ভারতের ইনফ্রাসট্রাকচার কতটা উন্নত- আমি ঢের ভাল জানি।
 
আমি যদি ঢাকা শহরের সংগে ভারতের যে-কোন শহরকে তুলনা করি- দেশের প্রবৃদ্ধি’র পরিসংখ্যান দিয়ে; ঢাকা অনেক এগিয়ে।
 
১৯৭১ সালের ঢাকা এবং ২০১৬ সালের ঢাকা আকাশ আর পাতাল। কিন্তু ১৯৭১ সালের মুম্বই, কোলকাতা বা দিল্লী- ঢাকার উন্নয়নের সাথে তাল দিতে পারে নি।
 
মুম্বই ও নতুন দিল্লীর উন্নয়ন হয়েছে ভারত সরকারের সরাসরি সম্পৃক্ততায়।
আর ঢাকার বেসিক উন্নতি হয়েছে দেশের প্রাইভেট সেক্টরের কর্মকান্ডে।
ঢাকা যদি নতুন দিল্লীর মতো তুলনামুলকভাবে যথেষ্ঠ ভালো সরকার পেত- ঢাকার চেহারা বর্তমানের চেয়েও হাজারগুন উন্নত করা সম্ভব ছিল।
 
কিন্তু আমার ভাবনা সেখানে না।
আমি ভাবছি ভারতের অর্থনীতি’র অবস্থা নিয়ে।
 
আমি সত্যিই ভাবতে পারি না ১৩০ কোটি মানুষের একটা দেশে এক মুহুর্তের নোটিশে তাদের কারেন্সী বাজেয়াপ্ত করে দেয়া যায়!
 
আমি ভারতের অর্থনীতিকে কোনদিনই শ্রদ্ধা করিনি।
শতশতবার আমার নিজের চোখে দেখা ভারতবর্ষের অথনীতিকে শ্রদ্ধা করার মতো কোন কিছু আমি কোনদিনও খুঁজে পাইনি।
 
কিন্তু তাই বলে ওদেশের অর্থনীতি এতটাই মেরুদন্ডহীন?
আমি সত্যিই ভাবতে পারছি না।
 
এই দেশ করবে পাকিস্তানের সংগে যুদ্ধ?
ওরা তো বাংলাদেশের সংগেই যুদ্ধে টিকতে পারবে না!
পাকিস্তান তো অনেক পরের হিসাব।
 
এই ভারত যখন চায়না’র সংগে নিজেদের তুলনা করার চেষ্টা করতো- আমি তখন সত্যিই অট্রহাসি হাসতাম।
 
আমি চায়না সম্পর্কে ভালই জানি। শত বার না হলেও অর্ধশতবার তো চায়নায় গিয়েছি। চায়নার সংগেও অনেক ব্যবসায় করেছি বা এখনও করছি।
 
চায়না সেই দেশ- যে দেশ কিনা আমেরিকা’কে লোন দেয়।
পৃথিবীতে এমন কোন দেশ নেই যেখানে চায়না বিনিয়োগ করেনি।
চায়না সেই দেশ- যে দেশের কাছে বৃটিশ প্রাইম মিনিষ্টার পর্যন্ত ইংল্যান্ডের একটি বিশেষ অঞ্চল ডেভেলপ করে দেবার আবদার করে। আবেদন করে।
 
চায়নার অর্থনীত কতটা শক্তিশালী একটু উদাহরণ দিই।
সেই ২০০০ সালে প্রথম বার যখন চায়না যাই- তখন ১ ডলারে পাওয়া যেত ৬.২৫ আরএমবি।
এবং ২০১৪ সালে যখন শেষবার চায়নাতে যাই- তখন আমি ৬.২৫ আরএমবি তে পেয়েছি ১ ডলার।
 
ডলারের অধপতন হয়েছে ঠিকই- কিন্তু চাইনিজ ইউয়ানের কোন অধপতন হয়নি বরং শক্তিশালি হয়েছে ১৫ বছরে।
 
চায়নার অর্থনীতি এই পৃথিবীর সবচে ক্রমবর্ধমান ও শক্তিশালী অর্থনীতি।
চায়না কি কোন দিন পারবে তার কারেন্সীকে হঠাৎ ক্লোজ করে দিতে?
 
আচ্ছা, আমেরিকা যদি তার কারেন্সীকে সাট-ডাউন করে নেয়- কি হবে এই বিশ্বের?
 
না।
আমেরিকা বা চায়না কোনদিনও তা করবে না। অতটা ‘দুর্বল’ বা ‘ইডিয়ট’ লোকজন আমেরিকান বা চাইনিজ সরকারের দায়িত্ব নেয় না।
 
ইন্ডিয়া আসলে একটা ‘মাল’ ই!
 
ইন্ডিয়ার প্রতি আমার সত্যিই আর কোন শ্রদ্ধাবোধ থাকলো না।
ওদের বাথরুম নেই- রাস্তায় প্রস্রাব পায়খানায় অভ্যস্ত ওরা- এটা সবাই জানে।
 
কিন্তু ওদের টাকা’র এই করুণ দশা! এটা তো কেউ জানতো না।
একটা দেশের কারেন্সী নকল হতেই পারে। সেজন্য যথেষ্ঠ প্রটেকশন দেবার ক্ষমতাই যদি সরকার না রাখে- তাহলে ঐ দেশ চালানোর দরকারটাই বা কী?
 
বাংলাদেশের কারেন্সীও তো নকল হচ্ছে হরদম।
ইউএস ডলারও নকল হচ্ছে সারা বিশ্বে সবচে বেশী।
 
আচ্ছা আজ রাতে যদি পাকিস্তান ভারতবর্ষকে আক্রমণ করে বসে- ভারতবাসী কোথায় পালাবে? খাবার কেনার টাকাও তো নেই ওদের হাতে!
 
আর এই ভারত কি না বাংলাদেশ কে কন্ট্রোল করে?
আসলে কন্ট্রোলটা ভারত কোনদিন করেনি। এই কন্ট্রোল করার সুযোগটা ভারতকে দিয়েছে বাংলাদেশের দুই আবাল মহিলা শেখ হাসিনা আর খালেদা জিয়া।
 
এই দুই মহিলা প্রয়োজনে অপ্রয়োজনে নিজেকে ক্ষমতায় রাখতে বা ক্ষমতায় আনতে ভারতের কাছে করুণা ভিক্ষা করেছে। বার বার। বহুবার।
 
ভারত সেই সুযোগটাই যাষ্ট নিয়েছে।
 
সুযোগ দিলে সুযোগটা নেয় না কে?
 
এই অসভ্য দুই মহিলা বাংলাদেশ থেকে বিদেয় নিলে বাংলাদেশ আবারও মাথা তুলে দাড়াতে পারবে।
 
তখন না হয় ভারতবাসীকে আমরাই শুভেচ্ছার উপহার হিসাবে কয়েক কোটি বাথরুম বানিয়ে উপহার পাঠাবো।
 
দরকার হলে- আমরা ওদের উপর কর্তৃত্বও করতে পারবো।
ঠিক ওরা যেভাবে আমাদের উপর করতে চায়। আমরাই সিদ্ধান্ত নিব নেক্টট গভার্ণমেন্ট এ মোদীই থাকবে না সোনিয়াপুত্র রাহুলকে বসাবো।
 
ওদের টাকা-টা আমরা ছেপে দেবার অফার দিতে পারি।
আমাদের জয়দেপপুরের টাকশাল যথেষ্ঠই উন্নত।
 
পাকিস্তানও কিন্তু ভাল টাকা বানাতে পারে।
পাকিস্তানের উচিৎ এই চরম বিপদের দিনে ভারতবাসীকে টাকা ছাপিয়ে দেবার অফার দেয়া। প্রতিবেশীকে সাহায্য না করলে চলে?
 
পাকিস্তান হয়তো ভারতকে টাকা অফার করতেও পারে এই দুঃসময়ে।
দুর্বল প্রতিবেশী বলে কথা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *