‘পিপলস রিপাবলিক অব চায়না’ বা পিআরসি এবং ‘রিপাবলিক অব চায়না’ বা আরওসি- দুটি আলাদা রাষ্ট্র। পিআরসি-কে আমরা এক কথায় চায়না বলে চিনি- যেটাকে মেইনল্যান্ড চায়নাও বলা হয়; আর আরওসি-কে আমরা চিনি তাইওয়ান নামে।
উভয় দেশের জাতীয়তাই চাইনিজ, ভাষাও চাইনিজ।কমিউনিষ্ট এবং জাতীয়তাবাদীদের মধ্যে সৃষ্ট গৃহযুদ্ধে জাতীয়তাবাদীরা মূলত পরাজিত হয়ে মেইনল্যান্ড ছেড়ে পালিয়ে তাইওয়ান নামে একটি দ্বীপে যেয়ে (সেটাকে দখল করে) নতুন একটি রাষ্ট্র গঠন করে ও নাম দেন রিপাবলিক অব চায়না বা তাইওয়ান।
তখন তারা দাবী করে মেইনল্যান্ড চায়না তাদেরই অংশ এবং সময় ও সুযোগ মতো তারা মেইনল্যান্ড ফিরে পাবে। জাতিসংঘের ৫টি স্থায়ী সদস্য দেশের একটি ছিল এই জাতীয়তাবাদী চিনারা ও তাদের দেশ তাইওয়ান।
১৯৭১ সালে মেইনল্যান্ড চায়নার সংগে আমেরিকা সমোঝোতা করে এবং তাইওয়ানকে বাদ দিয়ে মেইনল্যান্ড চায়নাকে গ্রহন করে- জাতিসংঘের স্থায়ী প্রতিনিধি হিসাবে। সেই উত্তপ্ত সময়টাতে পাকিস্তান মুলত দূতিয়ালি করে চায়না-আমেরিকা জন্য। আর তাই, সে সময় আমেরিকা বৃহত্তর স্বার্থে পাকিস্তানের পক্ষাবলম্বন করে- বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে।
তাইওয়ানের অর্থনীতি চায়নার চেয়েও অনেক শক্তিশালী; জীবন-যাত্রার মানও অনেক উন্নত। তাইওয়ান মূলত জাপান-কোরীয়ার মতোই অত্যন্ত উন্নত্ ও সমৃদ্ধ একটি দেশ।
অপর দিকে কমিউনিষ্টরা মেইনল্যান্ড এর দায়িত্ব নেয় এবং তাইওয়ান ও হংকং-ম্যাকাও (৯৯ বছরের বৃটিশ ও পুর্তগীজ শাসিতত) তাদের স্বায়ত্বশাসিত অংশ বলে আত্মতৃপ্তিতে ভুগেন।
৯৯ বছরের লীজ শেষে হংকং, ম্যাকাও তাদের কাছে ফিরে এলেও (সার- স্পেশাল এডমিনিশট্রেটিভ এরিয়া নামে) সত্যি বলতে হংকং, ম্যাকাও স্বাধীন রাষ্ট্রের মতোই। চায়নার এক দেশ দুই নীতির আলোকে হংকং, ম্যাকাও যেতে চাইনিজদেরও পাসপোর্ট-ভিসা লাগে। ওসব দেশের মুদ্রা, অর্থনীতি সবই আলাদা। মেইনল্যান্ড চায়নায় গাড়ী চলে রাস্তার ডানদিকে কিন্তু হংকং, ম্যাকাও-এ গাড়ী চলে রাস্তার বাম দিক দিয়ে এবং জনগণও গণতান্ত্রিক শাসনে অভ্যস্ত। তবে তারাও চাইনিজ।
মেইনল্যান্ড চায়নার প্রত্যেকটি এয়ারপোর্ট এর তিন ধরণের আলাদা আলাদা গেইট থাকে। চাইনিজ, ইন্টারন্যাশনাল এবং তাইওয়ান-হংকং-ম্যাকাও।
হংকং ও ম্যাকাও ‘লীজ চুক্তি’ শেষে শান্তিপূর্ণভাবে চায়নার নিকট হস্তান্তরিত হয়েছে কিন্তু তাইওয়ান আদৌ কোনদিন হবে বলে তো ধারণা করার কোন কারণ দেখি না। আর, চাইনিজরাও এখন সেটা ভাবছেন না। কিন্তু আত্মঅহংকারে ছাড়ও দিতে পারছেন না। শোনা যাচ্ছে, চায়না হয়তো বা সামরিক অভিযান চালিয়ে তাইওয়ানকে শিগগিরই তাদের সংগে জোর-পূর্বক সংযুক্ত করবে।
সে যাই হোক, শুধু তাই-ই নয় তিব্বতও চায়নার ‘সার’ এর আওতাধীন। সেখানে যেতেও আলাদা ‘ট্রাভেল পাস’ নিতে হয়, সাধারণ চায়না ভিসাতে তিব্বত যাওয়া যায় না।
দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্যি নেপাল, ইন্ডিয়া, বা পাকিস্তানীরা গ্রুপ টূ্রে তিব্বত ভ্রমণ করার ‘পাস’ পেলেও বাংলাদেশীদের তিব্বত ভ্রমণের অনুমতি দেয়া হয় না। আমি নিজে দু’বার চেষ্টা করেও তিব্বতে ঢুকতে পারিনি।