৪ সেকেন্ড


আমি ঢাকার মানুষ হলেও আমার জন্ম কিনতু যশোহর জেলার তৎকালীন মাগুরায়; আমার বাবা তখন মাগুরার সোনালী ব্যাংকে কর্মরত ছিলেন।
সেটাও বাংলাদেশ জন্মের পর।
ইস আমার জন্মটা যদি আর বছর কয়েক আগে হতো তাহলে নির্ঘাৎ মুক্তিযোদ্ধা’র একটা সার্টিফিকেট বাগিয়ে নিতে পারতাম। কে জানে, বর্তমান বাংলাদেশের যা অবস্থা একটু ট্রাই করলে হয়তো বীর উত্তম, বীর মধ্যম বা সরাসরি বীরশ্রেষ্ঠটাও বাগিয়ে নিতে পারতাম।
যে দেশে সজীব ওয়াজেদ জয় এর মতো কমপিউটার সেলস ও ফটোশপ এক্সপার্ট একজন ‘প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ’ আইডেন্টিটি নিয়ে দেশের গরীব মানুষের কষ্টের দেড় কোটি টাকার মাসিক বেতন হাতিয়ে নিতে পারে; রাখাল বালক আতিয়ার মিয়া বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্ণর হতে পারে, আবুল মালের মাতো একটা ‘পাগলা মাল’ অর্থমন্ত্রী হতে পারে; আর ফাইনালী হাসিনা-খালেদারা হয় প্রধানমন্ত্রী- সে দেশে সবই সম্ভব।
আবার শুনলাম সম্প্রতি শাহাজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ের মাষ্টার ড. জাফর ইকবাল ষাড় নাকি একটি মেশিন উদ্ভাবন করেছেন। আরও জানতে পারলাম, সে নাকি আগামী বছর পদ্মভূষণ বা শ্রীবিভুষণ পদক না পেলেও নোবেল তার কনফার্ম! smile emoticon এরম মেশিন আগে কেউ উদ্ভাবন করতেই পারে নাই!
ওই মেশিনের এই মাথা দিয়ে কাউকে ঢুকালে সে ঐ মাথা দিয়ে বের হয়ে যাবে। তারপর সংগে একটা সার্টিফিকেটও নাকি অটোমেটিক প্রিন্ট হয়ে যাবে- সে ‘ইন্ডিয়ান রাজাকার’ না কি ‘পাকিস্তানী রাজাকার’! মি. জাফর তো ৭১ এ রীতিমত যুবক ছিল, তো ওই ষাড়কে দিয়েই প্রথম পরীক্ষা হয়ে যাক সে কোন দুঃক্ষে চোরের মতো পালিয়ে বেড়ালো, যুদ্ধ না করে!
বিশাল আবিষ্কার।
যাক এই মহামূল্যবান আবিষ্কারের কথা প্রকাশ করা যাবে না। ইউনির্ভাসিটি অব ওয়াশিংটন যদি টের পেয়ে যায়- কে জানে হয়তো জাফর ষাড়ের পিএইচডি ডিগ্রীটা না আবার কেড়ে নেয়; ওরা তো আর ছাগল না! তাছাড়া ওরা ছাগলদেরও পিএইচডি দেয় না বলেই জানি।
দেশ যে কিভাবে এগিয়ে যাচ্ছে!!! তর তর করে, অবশ্য ভয় করে আবার না ব্যাঙের মতো ফেটে যায়।
তাই একটু ভয়ে ভয়ে আছি।
যাক লেখাটা শুরু করেছিলাম যে বিষয়টা নিয়ে তাহলো, আজ হরিণের মাংস খেলাম; জীবনে প্রথম বার।
মাগুরায় জন্মের প্রসংগটা এনেছিলাম কারণ ওই আমলে যশোহর এ হরিণের মাংস পাওয়া যেত এবং আমাদের বাড়ীতে তা মাঝে মধ্যেই খাওয়া হতো। কিনতু দূর্ভাগ্য আমার জন্মের পরপরই আমাদের পরিবারটি ঢাকায় ফিরে আসে। আমার আর খাওয়া হয়ে উঠেনি!
অনেকবার ট্রাই করেছি, কিনতু আমি হরিণের মাংস আর যোগাড় করতে পারিনি। আজ কিনে আনলাম জ্যাকসন হাইটস থেকে। বেশী করে পেয়াজ দিয়ে ভুনা ভুনা করে রান্নাও করলাম। (আমি কিনতু মোটামুটি সবকিছুই রান্না করতে পারি!)।
আসলে হরিণের মাংস যে না খেয়েছে- সে কোনদিনও বুঝবে না যে এটা কতটা শুস্বাধু একটা মাংস।
অনেকেই আমাকে অভিযোগ করেন, আমি লিখতে বসলে প্রায়ই প্রসংগ পরিবর্তন করে ফেলি। এটা আমি নিজেও বুঝি। কিনতু এখানে আমার রয়েছে দুইটা গুরুত্বর সমস্যা।
প্রথম সমস্যা হলো- আমি যখন লিখতে বসি, শুধু মূল ভাবনাটা মাথায় নিয়ে কী-বোর্ডে আংগুল বসাই। তারপর আমার আর নিজের প্রতি সেই ভাবে কোন নিয়ন্ত্রণ থাকে না। লেখাগুলি অটোমেটিক চলে আসে। অনেক সময় কিছু এডিট করি, অনেক সময় করিও না। যা হবার হবে।
আর দ্বিতীয় সমস্যাটা একটু আলাদা।
যে-কোন মানুষ, কোন একটা বিষয়ের প্রতি তার আগ্রহ সৃষ্টি হবে কি না- সেটা ৪ সেকেন্ডের মধ্যেই মনস্তাত্তিকভাবে সিদ্ধান্ত নিয়ে নেয় অটোমেটিকেলী।
বিষয়টা আরেকটু বুঝিয়ে যদি বলি তাহলে দাঁড়ায়, আপনি হয়তো কোন একটা লেখা বা উপন্যাস হাতে নিলেন, তারপর যে-কোন একটা পৃষ্টা (সাধারণত প্রথম পাতা থেকে; আমিসহ কেউ কেউ একটু ব্যাতিক্রম যারা ভেতরের বা শেষ পাতাও দেখে) থেকে প্রথম ১টা বা ২টা লাইন পড়েই সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলে- এই বই বা লেখাটা পড়বে কি না? এবং এ কাজটায় মানুষের অবচেতন মন মাত্র ৪ সেকেন্ডের মধ্যেই সিদ্ধান্ত দিয়ে ফেলে।
আচ্ছা আপনি কি আমার লেখাটা এই পর্যন্ত পড়লেন?
যদি পড়ে থাকেন তাহলে বলতেই হবে, আমার লেখা আপনাকে ৪ সেকেন্ডের বেশী সময় আটকে রাখতে পেরেছে।
আমার লেখাকে আপনার মূল্যবান সময় দেবার জন্য ধন্যবাদ।
সত্যি কথা বলতে আজ মাথায় রেখেছিলাম সম্পূর্ণ ভিন্ন একটা বিষয় নিয়ে লিখবো; কিনতু তা আর হয়ে উঠলো না; যাক আরেকদিন লিখবো।