৩০ বছর পর!


আমেরিকার বলতে গেলে সব আইন-ই খুব মজার এবং জনমুখী।
অর্থাৎ মানুষের অধিকারকে রক্ষা করতেই এদেশের তাবৎ আইন তৈরী হয়।

এরমই একটি মজার আইন হচ্ছে, যে-কোন সরকারী নথি এরা ৩০ বছর পর পাবলিকের জন্য উম্মুক্ত করে দেয়। অর্থাৎ রাস্ট্রিয় অতি গুরুত্বপূর্ণ বলে কিছুই আর ৩০ বছর পর অবশিস্ট থাকে না। সাধারণ মানুষ এসব নিয়ে গবেষনার সুযোগ পায় এবং এও জানতে পারে যে তাদের নেতারা নিজ দেশের জন্য ঠিক কি কি কাজ করেছে বা দেশের স্বার্থ কতটুকু রক্ষা করা হয়েছিল।

বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময়কার আমেরিকার ভূমিকা নিয়ে সকল নথি যখন ৩০ বছর পর উম্মুক্ত করে দিল- তখন আমরা না জানা অনেক কিছুই বুঝতে পারলাম। প্রশান্ত মহাসাগরে আমেরিকার মোতায়েনকৃত সপ্তম নৌ-বহর নিয়েও অনেক আলোচনা-সমালোচনার পর বাস্তবতাও আমরা জানতে পেরেছিলাম সেই ৩০-বছরের আইনটির বদৌলতে। বাংলাদেশ হলে তো ওসব জীবনেও জানা যেত না- যদি না কারো ব্যক্তিগত স্বার্থ জড়িত থাকতো।

আর তাই তো পিনাকী দা’ও তার মার্কিন ডকিউমেন্টে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ বইটি লিখতে পেরেছিলেন। বা বইটি বেশ জনপ্রিয়ও হয়েছিল। আমরা বাংলায়ও জানতে পেরেছিলাম সেসময়ের বিস্তারিত।

আমি ভেবে দেখলাম, আসলে ব্যক্তিগত জীবনেও সকলেরই উচিৎ তাদের পুরাতন দিনের গল্পগুলো উম্মুক্ত করে দেয়া; অন্ততপক্ষে নিজ পরিবার পরিজনদের কাছে। এতে পরবর্তী প্রজন্ম জানতে পারবে তাদের দাদা-দাদী বা নানা-নানীরা কি ‘চীজ’ ছিলো- একএকজন তাদের যৌবনে।

কিন্তু সেসব আর হচ্ছে কৈ?
এই যে ধরুন আমাদের রবিবাবু।

এই ভদ্রলোক যদি তার নিজের ‘পুরাতন’ গল্পগুলো, আই মিন তার নিজের ভাবীকে নিয়ে তার গল্পগুলো সাহিত্য বা কবিতা আঁকারে লিখে উম্মুক্ত করে দিতেন- তাহলে বাংলা সাহিত্য আরও অন্তত হাজার পাতার এক ‘গীতাঞ্জলী’ উপহার পেতো। কে জানে হয়তো সাহিত্যে দ্বিতীয়বারের মতো নোবেলও এই বাংলাতেই চলে আসতো, তাতে।

কবি গুরু যে কেন তা করলেন না- সে আমি বাপু তা বুঝে পাই না!
যাই হোক, তিনি সেই আমলের মানুষ, হয়তো নিজেই বুঝে উঠতে পারেননি। বা ভাইদের সংগে জমিদারী নিয়ে মারপিট হয়ে যেতে পারে বা উত্তরাধিকারীদের মধ্যেই ‘ঝামেলা’ বেঁধে যেতে পারে বিধায় হয়তো তা করেননি। আফটার অল রবিন্দ্রনাথ ঠাকুরঝি তো বুদ্ধিমান পুরুষ ছিলেন। তার বুদ্ধির কাছে আমরা তো নস্যি।

আমার পাঠকগণ বেশ বুদ্ধিমান ও সচেতন।
সবাই আমার লেখা হজম করতে পারে না। ‘চেতনা’ থাকলে তো তা সম্ভবই হয় না; বদহজম হয়ে যায়। আর এজন্যই চেতনাজীবি আওয়ামী জাতিকে এই ‘বদহজম’ এর হাত থেকে রক্ষায় ডিজিএফআই এবং বিটিআরসি যৌথভাবে মিলেমিশে আমার ব্যক্তিগত লেখালেখির ওয়েব পোর্টালটি (www.taufiqulpius.com) পর্যন্ত বাংলাদেশে নিষিদ্ধ করে রেখেছে।

করুক গে যা খুশী।
যদ্দিন ফেসবুক আছে- এখানেই আপাতত লিখি।

রবিন্দ্রনাথ ঠাকুর এই ‘৩০-বছররের পুরাতন বিষয়টি এড়িয়ে গেলেও আমি ভাবছি- আমি তাঁর মতো এড়াবো না। আমি পুরাতন সব কথা প্রকাশ করে দিবো।

রবি বাবু বড় মানুষ; ওনাকে এখানে টানাটানি করা ঠিক না; জানতে পারলে মনোকস্ট পাবেন। ওপাড়ে ভালো থাকুন দাদু।

লেখালেখির কিছু সমস্যা আছে।
এই যে আমি লিখি, কোন ‘ছোট গল্প’ লিখলেই পাঠকগণ আমাকে সরাসরি কথক এর চরিত্রতে বসিয়ে দেন। অনেকেই ধরেই নেন যে, গল্পের মুল চরিত্রটি আমি নিজে। অথচ আমি যে কস্ট করে গল্প তৈরী করলাম, কয়েকটা চরিত্র তৈরী আঁকলাম, সেজন্য কোন ধন্যবাদ তো পাই-ই না; বরং আমাকে উল্টো বিব্রতকর অবস্থাতে পরে যেতে হয়। মাঝে মধ্যে মন চায়, দুর ছাই, গল্পই লিখবো না আর।

তারপরও লিখি।, লিখতে হয়।
আজ আর গল্প নয়, আজ সব সত্য কথন হবে।

আজ তেমনি একটি ৩০ না ঠিক ২৪ বছর বা দুই-যুগের পুরাতন গল্প বলবো। গল্প তো নয়, আসলে একটি রহস্যময় চিঠির গল্প।

১৯৯৬ সালের দিকে হঠাৎ আমি আমার অফিসের ঠিকানায় একটি চিঠি পাই।

দু’টাকা দামের হলুদ রঙের খামে প্রেরকের কোন নাম-ধাম ছিল না। শুধুমাত্র আমার নাম ও ঠিকানা লেখা- গোটা গোটা হাতে।

প্রেরক না দেখে আমি কিছুটা অবাক।
এমন তো হবার কথা নয়, প্রেরক ছাড়া তো চিঠি হতে পারে না।

খুললাম এনভেলপটি।
সাধারণ কাগজে একটি চিঠি বেরিয়ে আসলো তা থেকে।

সেখানে কোন সম্বোধন নেই, নেই প্রেরক এর নাম বা ঠিকানা।
গোটা গোটা হাতে মাত্র ৩টি সাদামাটা লাইনে সেখানে লেখা ছিল:

‘আগামী ৭ দিনের মধ্যে আপনি আপনার সদ্য রাখা গোঁফ কেটে ফেলবেন। যদি না কাটেন তাহলে খুব বিপদে পরে যাবেন- বলে দিলাম কিন্তু!’

ব্যস, এটুকুই।
ঐ সময় আমি শখ করে গোঁফ রেখেছিলাম বছর খানেকের জন্য।

যাই হোক, আমি তো ভয় পাই না কাউকেই।
তাছাড়া প্রেরক যেহেতু নিজের পরিচয় দেবারই সাহস পায়নি- সেহেতু তার মতো ভীতুকে ভয় পাবারই বা কি আছে।

ঐ চিঠি পাবার পরও আমি আরও প্রায় ৬-সাত মাস গোফ বলবৎ রেখেছিলাম।

ঐ লিখিত হুমকীতেও আমার যে কোন ক্ষতি হয় নি, সেটা তো দেখতেই পাচ্ছেন। এখনও অবধি দিব্বি বেঁচে বর্তে রয়েছি।

যাই হোক, ইনবক্সে কিন্তু অনেক লেখা পাই এই বৃদ্ধ বয়সে এসেও; সুতরাং ৩০ বছর পর এসবও যে ফাঁস হবে না- তার কিন্তু কোন নিশ্চয়তা দিয়ে যেতে পারলাম না।

ভীতুরা সাবধান।


Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *