বদরের প্রান্তর মদীনা থেকে প্রায় ১৫৮ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। আর মক্কা থেকে প্রায় ৩২০ কিলোমিটার দূরে। মক্কা থেকে একটি মাইক্রো নিয়ে আমি বদরের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হই। চলার পথে দেখতে থাকি দু’পাশের অতি রুক্ষ মরুভূমি। ছোট ছোট পাথুরে পর্বতময় এক রুক্ষ মরুময় প্রান্তর। তীব্র তাপদাহ যেন এয়ারকন্ডিশন গাড়ীতে বসেও উপলদ্ধি করছিলাম। এই রুক্ষ মরুপথেই আমার প্রিয় নবী মুহাম্মদ (সা) একদিন মদীনায় গিয়েছিলেন মক্কা থেকে হিযরত করে।
মক্কার মরুভূমিটা অন্যরকম।
মরুভূমি বলতে আমরা সাধারণত সাহারা মরুভূমিকেই কল্পনায় নিয়ে আসি, যেখানে শুধুই বালু আর বালু। বালুর পাহাড়। আদতে মরুভূমি মানে হচ্ছে বিরাণ ভূমি – যেখানে রুক্ষ পরিবেশ জনমানবহীন স্থান। মরুভূমি বলতেই বালু থাকতে হবে ওমন কোন কথা নেই। যেমন এন্টার্কটিকা হচ্ছে পৃথিবীর সবচে বড় মরুভূমি – অথচ সেখানে কোন বালু নেই; রয়েছে শুধু মাইলের পর মাইল বরফ, বরফ আর বরফ। সাদা ধবধবে বরফ।
মক্কাও মরুময় স্থান।
এখানকার মরুভূমি আরও বেশী রুক্ষ ও বৈচিত্রপূর্ণ। মক্কার মরুভূমিতে রয়েছে ছোট ছোট অসংখ্য পাথুরে টিলাভূমি। ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকতে দেখেছি অসংখ্য বিভিন্ন আকৃতির পাথর। রয়েছে বালুও, ছোট ছোট উদ্ভিদ। সবই বেশ রুক্ষ দেখতে।
সেই আমলে, আজ থেকে প্রায় ১৫০০ বছর আগে মক্কা থেকে মুহাম্মদ (সা) এর চাচাতো ভাই তথা দুধভাই (দু’জনেই হালিমার বুকের দুধ পান করেছিলেন); এবং প্রায় একই আকৃতির চেহারার আবু সুফিয়ান ইবনে হারব মক্কার কুরাইশ বংশের বনু আবদে শামস গোত্রের প্রধান নেতা হিসাবে বদরের যুদ্ধে মুহাম্মদ (সা) এর বিপক্ষে কুরাইশদের পক্ষে অন্যতম নেতৃত্বে ছিলেন; যদিও তিনি সরাসরি যুদ্ধক্ষেত্র এড়িয়ে যান।
তাদের বাহিনী মক্কা থেকে ৩২০ কিলোমিটার রুক্ষ পথ পাড়ি দিয়ে বদরের প্রান্তে পৌছান। আর তাদের প্রতিহত করতে মদীনা থেকে ১৫৮ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে মাত্র ৩১৩ জন সাহাবী নিয়ে মুহাম্মদ (সা) বদরের প্রান্তরে এসে উপস্থিত হন এবং বিশাল কুরাইশ বাহিনীকে পরাস্থ করেন।
হিজরী ২য় সনে মক্কার কুরাইশরা আরবে নিজেদের অবস্থান সুসংহত রাখতে মদিনার মুসলমানদের বিরুদ্ধে বদরের অভিযান প্রেরন করে। এই যুদ্ধে কুরাইশদের মধ্যে বাছাইকৃত নেতারা অংশগ্রহণ করে। মক্কার পৌত্তলিক বাহিনীতে ছিল আবু সুফিয়ানের স্ত্রী হিন্দার পিতা উতবাহ ইবনে রাবিয়াহ, হিন্দার আপন ভাই, ও চাচা। আবু সুফিয়ানই ছিলেন কৈশরে মুহাম্মদ (সা) এর বন্ধু, ভাই। অপরদিকে মুসলিম বাহিনীতে ছিলো হিন্দার আপন ভাই হুজাইফা ইবনে উতবা ও তাদের আযাদকৃত দাস সালিম মাওলা।
বদরের যুদ্ধের সূচনা হলে হিন্দের পিতা উতবাহ ইবনে রাবিয়াহ, ভাই ও চাচা সহ পৌত্তলিক বাহিনীর ৭০ জন গুরুত্বপূর্ণ সৈনিক নিহত হয়। ফলে হিন্দা ও তার স্বামী আবু সুফিয়ান বদরের যুদ্ধের ময়দানে এই মৃতদেহগুলো ফেলেই তাদের বাকি সৈনিকদের নিয়ে মক্কার পথে পালিয়ে গিয়ে নিজেদের প্রাণ রক্ষা করে।
মুলত বদরের পরাজয় মক্কার কুরাইশ নেতাদের ক্ষিপ্ত করে তুলে। এবং তারা প্রতিশোধ নেবার আশায় দিন গুনতে থাকে। বদরের পরাজয়ের পর উহুদের প্রস্তুতি নিচ্ছিলো কুরাইশরা, হিন্দাও প্রায় ১৫ জন মহিলা সুসংগঠিত করলো নিজের নেতৃত্বে।
হিন্দা বদরের পরাজয়ের প্রতিশোধ নিতে মক্কার কোরাইশদির উত্তেজিত করতে একটি কবিতা লিখেছিলেন-
’We have paid you back for Badr
and a war that follows a war is always violent.
I could not bear the loss of Utba
nor my brother and his uncle and my first-born.
I have slaked my vengeance and fulfilled my vow.
You, O Wahshi, have assuaged the burning in my breast.
I shall thank Wahshi as long as I live
until my bones rot in the grave.
বদরে মুহাম্মাদ (সা) এর চাচা হামজা ইবনে আবদুল মুত্তালিব (রা) হিন্দার প্রিয়তম ব্যক্তিদের হত্যা করেছিলেন; তাই হামজা (রা) কে হত্যা করার জন্য হাবশী ক্রীতদাস ওয়াহশীকে প্রচুর স্বর্ণ-অলঙ্কার ও অর্থ দেবার অঙ্গীকার দিয়েছিলো হিন্দা। ওয়াহশী ছিলেন জুবায়র ইবন মুতইমের ক্রীতাদাস।
মদীনায় উহুদের পর্বতের পাদদেশে হামজা ইবনে আবদুল মুত্তালিব (রা) এর কবরের সামনে দাঁড়িয়ে আমার মনে হচ্ছিলো আমি যেন উহুদের যুদ্ধে শহীদ হামজা’র ক্ষতবিক্ষত লাশটা দেখতে পাচ্ছি।
আমার কাছে ভীষন জীবন্ত মনে হচ্ছিল সবকিছু।
হযরত হামজা (রা) উহুদের প্রান্তরে ভাতিজা মুহাম্মদ (সা) এর সামনে দাঁড়িয়ে দু’হাতে দুই তলোয়ার নিয়ে দুর্দান্তভাবে যুদ্ধ করছিলেন।
আমি যেন দেখতে পাচ্ছিলাম হাবশী কালো ক্রীতদাস ওয়াহশী হিন্দার অফারকৃত প্রচুর স্বর্ণ-অলঙ্কার ও নগদ অর্থ পাবার লোভে কিভাবে পেছন থেকে বর্শা ছুঁড়ে দুর্দান্ত প্রতাপশালী বীর যোদ্ধা হামজা (রা) কে হত্যা করেছিলো।
হিন্দা বিনতে উতবা, যিনি ছিলেন আবু সুফিয়ানের স্ত্রী; তার পিতা ও ভাইকে হত্যার প্রতিশোধ নিতে কুরাইশ নারীদের সঙ্গে নিয়ে উহুদ পর্বতের প্রান্তরে নিহত মুসলিম সৈনিকদের উপর ঝাঁপিয়ে পড়লেন এবং তাদের নাক, কান, হাত, পা ইত্যাদি অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ কেটে চরমভাবে বিকৃতি সাধন করলেন।
এরপরে ওয়াহশী হামজা (রা) এর পেট কেটে তার কলিজাকে হিন্দা বিনতে উতবার কাছে আনে, যার বাবাকে-ভাইকে হামজা (রা) বদরের যুদ্ধের ময়দানে হত্যা করেছিলেন। হিন্দা হামজার কলিজাকে চিবিয়ে ফেলে দেয়। অতপর হামজা (রা)‘র লাশকে বিকৃত করে, এমনকি পরে তার শরীরের হাঁড় থেকে গলার হার এবং দুল তৈরী করে এবং সেগুলোসহ সে তার কলিজাও সংগে করে মক্কায় নিয়ে আসে হিন্দা।
হিন্দা চরিত্রটি বড়ই অদ্ভুৎ।
হিন্দা সম্পর্কে আমি আগ্রহী হয়ে উঠি। তাকে জানার চেস্টা করি।
অনেক মানুষের, বিশেষত অনেক কালজয়ী মহিলাদের জীবনী আমি পড়েছি। কিন্তু হিন্দার জীবনী, তার চারিত্রিক বৈশিষ্ঠ্য বড়ই বৈচিত্রময়; আভিজাত্যময়। অসীম সাহসী এক নারী ছিলেন হিন্দা। হিন্দা ছিলেন সেই সময়ের একজন নামকরা কবিও।
হিন্দা নিজেও ছিলেন মক্কার কুরাইশ বংশের মেয়ে।
কুরাইশ বংশের আরেক যুবক ফাকিহ ইবনে আল মুগিরার সংগে হিন্দার প্রথম বিয়ে হয়েছিলো কিন্তু সে বিয়ে টিকেনি বেশীদিন। স্বামী ফাকিহ হিন্দার চরিত্র নিয়ে মিথ্যা সন্দেহ করে ব্যভিচারী বলে তালাক দিয়ে দেয়।
অতপর, আরেক কুরাইশ সুদর্শন যুবক আবু সুফিয়ান রীতিমত প্রতিযোগীতায় অবতীর্ণ হয়ে হিন্দাকে বিয়ে করেন। আবু সুফিয়ানও ছিলেন সেসময়ের একজন নাম করা কবি। হিন্দাই আবু সুফিয়ানকে স্বামী হিসাবে বেছে নেন।
ইসলাম প্রচার শুরু করার পর যদ্দিন মুহাম্মদ (সা) এর চাচা আবু তালিব ইবনে আবদুল মুত্তালিব জীবিত ছিলেন ততদিন মক্কার কুরাইশরা মুহাম্মদ (সা) কে সেভাবে বড় কোন ক্ষতি করার সাহস পেতো না। আবু তালিব কুরাইশ বংশের বনি হাশিম গোত্রের প্রবীণ ও সম্মানিত নেতা ছিলেন। নবী মুহাম্মদ (সা) এর নবুয়াতকালীন সময়ে তিনি গোত্রীয়ভাবে তাঁর সর্বাত্মক নিরাপত্তার ব্যবস্থা গ্রহণ করেছিলেন। কিন্তু চাচা আবু তালিব মারা যাবার পর কুরাইশরা মুহাম্মদ (সা)কে সরাসরি হত্যা করার জন্য মরিয়া হয়ে উঠে। মুহাম্মদ (সা) সহ মুসলিমদের একঘরে করে রাখে কয়েক বছর।
মুহাম্মদ (সা) মক্কা থেকে তায়েফে পালিয়ে যান কিন্তু সেখানেও নতুন ধর্ম প্রচারে প্রচন্ড বাঁধাপ্রাপ্ত হন। আর ঠিক তখনই মদীনাবাসী মুহাম্মদ (সা) কে মদীনায় যাবার জন্য আমন্ত্রণ জানায়। মুহাম্মদ (সা) মদীনায় হিযরত করেন।
সেময়ও হিন্দা ইসলামের প্রতি প্রচণ্ড বিদ্বেষী সত্ত্বেও প্রখর আত্মমর্যাদাবোধ এবং নারী জাতির প্রতি তীব্র সহানুভূতি সম্পন্ন নারী ছিলেন। রাসূলুল্লাহ মুহাম্মাদ (সো) এর কন্যা জয়নাবের মক্কা থেকে মদিনা হিজরতের সময় ইসলাম ধর্ম ও নবী বিদ্বেষী এই হিন্দাই সবচে বেশী সাহায্য করেছিলেন।
হিন্দা জয়নাবকে বলেছিলেন, ‘ওহে মুহাম্মাদের মেয়ে! মদিনায় তোমার পিতার নিকট যেতে যদি কোন সাহায্য প্রয়োজন হয়, তবে আমাকে বলো। পুরুষদের মধ্যে যে দ্বন্দ্ব-ফাসাদ তা নারীদের সম্পর্কে কোন রকম প্রভাব ফেলে না।’
এরপর যখন নবীকন্যা জয়নাব মদিনার উদ্দেশ্যে রওনা হলেন তখন কুরাইশরা তাকে বাঁধা প্রদান করলো, এবং তার সাথে প্রচন্ড খারাপ আচরণ করলো; এমনকি কুরাইশরা তাকে উটের পিঠ থেকে থাক্কা দিয়ে ফেলে দিয়েছিলো। ফলে, সন্তানসম্ভবা জয়নাব বেশ আঘাত পেয়েছিলো।
আর এতেই প্রচন্ড ক্ষেপে গিয়েছিলেন হিন্দা। এবং কুরাইশদের লক্ষ্য করে বিদ্রুপের স্বরে বলেছিলেন, “সন্ধি ও শান্তির সময় কঠিন ও কঠোর গাধার মত আচরণ করতে পার, আর রণক্ষেত্রে ঋতুবতী নারীর রূপ ধারণ কর।”
অতপর হিন্দা জয়নাবকে নিজের কাছে রেখে সেবা শুশ্রূষা করে সুস্থ করে তোলেন। এর ফলে স্বাধীনচেতা হিন্দাকে কুরাইশদের সমালোচনার মুখেও পরতে হয়েছিলো কিন্তু তিনি ছিলেন নিজ কর্ম ও ব্যক্তিত্বে অবিচল।
উহুদের যুদ্ধের ময়দানে হিন্দার নেতৃত্বে কুরাইশ নারীরা তবলা বাজিয়ে সারিবদ্ধ সৈনিকদের সামনে ঘুরে ঘুরে গান গেয়ে তাদের উজ্জিবিত করতে থাকে। হিন্দার লেখা গানটি এরকম:
“তারকার কন্যা মোরা,
নিপুণ চলার ভঙ্গি।
সামনে যদি এগিয়ে যাও জড়িয়ে নেবো বুকে।
আর যদি হটে যাও পিছে,
পৃথক হয়ে যাব চিরদিনের তরে।”
উহুদের যুদ্ধের পরও হিন্দা ও তার স্বামী আবু সুফিয়ানের ইসলামবিদ্বেষী মনোভাব সক্রিয় থাকে।
যাই হোক, অবশেষে মক্কা বিজয়ের দিন হিন্দা একটি ইসলাম কবুলকারী দলের সাথে একত্রে গিয়ে ইসলাম গ্রহণ করেন। হিন্দা ও তার স্বামী খুব আতঙ্কিত ছিলেন, কেননা মক্কা বিজয়ের দিন মুহাম্মাদ (সা) ৬ জন পুরুষ ও ৪ জন মহিলাকে ক্ষমার আওতার বাইরে রাখেন এবং তাদেরকে নাগালের মধ্যে পাওয়া মাত্র হত্যার নির্দেশ দেন।
এটা শোনার পরে হিন্দা চোখ-মুখ ঢেকে মুহাম্মাদ (সা) এর মজলিসে প্রবেশ করেন এবং ইসলাম গ্রহণ করেন। এরপর মুহাম্মাদ (সা) তাকে কিছু নসিহত প্রদান করেন। মুহাম্মদ (সা) হিন্দাকে ভবিষ্যতে তাঁর সামনে আসতে সরাসরি নিষেধ করেন। হিন্দাকে দেখলে মুহাম্মদ (সা) এর তাঁর চাচা হামজা (রা) এর ক্ষতবিক্ষত দেহখানি চোখের সামনে ভেসে উঠতো বিধায় তিনি হিন্দাকে সামনে আসতে নিষেধ করেছিলেন।
অথচ, পরবর্তী জীবনে হিন্দার মধ্যেই ইসলামের একাগ্র চেতনা লক্ষ্য করা যায়। এবং মুহাম্মাদ (সা) তার জন্য দোয়া করেছেন যাতে তিনি দুনিয়া ও আখিরাতে সফলতা পান। হিন্দা মুহাম্মাদ (সা) এর জন্য মাঝে মধ্যেই বিভিন্ন উপহার পাঠাতেন।
হিন্দা ও আবু সুফিয়ানের পুত্র ছিলেন মুয়াবিয়া (রা); এবং মুয়াবিয়ার পুত্র ছিলেন ইয়াজিদ।
হযরত উমর (রা) এর সাথে আবু সুফিয়ানের পরিবারের খুব ভালো সম্পর্ক ছিলো। হিন্দা সবসময় উমরকে শ্রদ্ধা ও বিনয়ের চোখে দেখতেন। উমর (রা) এর আমলে আবু সুফিয়ানের পুত্র ইয়াযিদ ইবন আবি সুফিয়ানকে শামের ওয়ালী নিয়োগ পান। ওখানে ইয়াযিদ প্লেগ রোগে মারা গেলে মুয়াবিয়াকে শামের ওয়ালি নিয়োগ দেন।
হিন্দা একবার উমর (রা) এর নিকট হতে ব্যবসায়িক উদ্দেশ্যে ৪,০০০ দিরহাম ঋণ নেন, তার সাথে তার স্বীয় পুত্র মুয়াবিয়া ছিলো, তারা মদিনার “কালব গোত্রে” ব্যবসা করতে চলে যান। কিন্তু ব্যবসা করে লাভবান হতে পারেননি, তাই তারা উমরের রাজকোষে টাকা দিতে গরিমসি করেন, পরে উমর (রা) কঠোর অবস্থান নিলে তারা টাকা পরিশোধ করতে বাধ্য হন।
হিন্দা ইয়ারমুকের যুদ্ধে যোগদান করেন এবং যুদ্ধের ময়দানে মুসলিম সৈনিকদের রোমানদের বিরুদ্ধে উত্তেজিত করার জন্য কবিতা আবৃত্তি করেন।
মুসলিমদের বিরুদ্ধে বেশ কয়েকটি যুদ্ধে নেতৃত্ব দেয়া হিন্দার স্বামী আবু সুফিয়ান মক্কা বিজয়ের পর ইসলাম গ্রহন করেন এবং পরবর্তী যুদ্ধসমূহে মুহাম্মদ (সা) এর একজন সাহসী সৈনিক হিসেবে যুদ্ধ করেন। তায়িফ অবরোধের সময় তিনি তার একটি চোখ হারান।
যখন ৬৩২ সালে মুহাম্মদ (সা) মারা যান, তখন আবু সুফিয়ান নারজান এর দায়িত্বপ্রাপ্ত ছিলেন। এছাড়াও আবু সুফিয়ান ৬৩৬ সালের ইয়ারমুক যুদ্ধে লড়াই করতে গিয়ে তিনি তার দ্বিতীয় চক্ষু হারান। তিনি মুসলিম সেনাবাহিনীর নাকিব (স্টাফ প্রধান) হিসেবে যুদ্ধে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। তিনি তার নিজের ছেলে মুয়াবিয়া ইবনে আবি সুফিয়ানের নির্দেশনায় যুদ্ধ করেন।
আবু সুফিয়ান ৬৫০ সালে মদিনায় মৃত্যুবরণ করেন। তার জ্ঞাতিভাই উসমান (রা), যিনি ৬৪৪ খ্রিষ্টাব্দে তৃতীয় খলিফা পদে অভিষিক্ত হন, তিনিই আবু সুফিয়ানের জানাজা পড়ান।
পরবর্তীতে মুহাম্মদ (সা) আবু সুফিয়ানের স্ত্রী সাফিয়ার কন্যা, হিন্দার সৎমেয়ে রামলা বিনতে আবু সুফিয়ানকে বিয়ে করেছিলেন।
হিন্দা তার ছেলে মুয়াবিয়াকে দুধ পান করানো কাল থেকেই আত্মমর্যাদাবোধ সম্পন্ন, উদার, ভদ্র গুণে গুণনান্বিত করে গড়ে তোলার চেষ্টা করেন। হিন্দা তার শিশু ছেলেকে কোলে নিয়ে এই গান গাইতেন-
‘আমার ছেলে সম্ভ্রান্ত মূল বা খান্দানের।
তার পরিবারের মধ্যে অতি প্রিয় ও বিচক্ষণ।
সে অশ্লীল কর্ম সম্পাদনকারী নয় এবং নীচ প্রকৃতিরও নয়।
ভীরু ও কাপুরুষ নয় এবং অশুভ ও অকল্যাণের প্রতীকও নয়।
বানূ ফিহরের শীলা, তাদের নেতা।
মানুষের ধারণা ও অনমানকে সে মিথ্যা হতে দেয় না
এবং ভীত হয়ে পালিয়েও যায় না।’
হিন্দা তার শিশু বাচ্চাকে নিয়ে অনেক আশা করতেন যে, এই বাচ্চা একদিন আরবের নেতা হবে। আবার তিনি তার গোত্র ও বিভিন্ন মানুষদের থেকে আশ্বাস পেয়েছেন, এই বালক একদিন বড় নেতা ও আত্মীয়তার সম্পর্ক রক্ষাকারী ব্যক্তি হবে।
মুয়াবিয়াও তার মায়ের তেজস্বী, প্রতিবাদি, দূরদর্শী গুণের প্রশংসা করতেন এবং সেগুলোর চর্চা করতেন।