আমি যখন ক্লাস টু বা থ্রিতে পড়ি তখন থেকেই আমাদের বাড়ীতে ‘দৈনিক ইত্তেফাক’ পত্রিকাটি রাখা হতো। গ্রামের বাড়ী, দৈনিক পত্রিকাটি বিভিন্ন পথ ঘুড়তে ঘুড়তে সন্ধ্যার সময় এসে পৌছতো।
তারপর থেকেই মোটামুটি ২০০৪ সাল পর্যন্ত ইত্তেফাক পত্রিকাটি নিয়মিত পড়া হতো। অভ্যস্ত হয়েই পড়েছিলাম। এরপর এক পর্যায়ে আমি অন্য সকলের সংগেই ইত্তেফাক ছেড়ে যুগান্তর হয়ে প্রথম আলো পত্রিকাটি পড়া শুরু করি।
প্রথম আলো পত্রিকাটির গেটআপ অসাধারণ।
বিজ্ঞাপন দাতারাও প্রথম আলোকেই বেছে নেয়।
কিন্তু এর সংবাদ উপস্থাপনা খুবই বিরক্তিকর। ইত্তেফাকের সংবাদে বস্তুনিষ্ঠতা পাওয়া যেত এবং সংবাদগুলি ছিল গ্রহণযোগ্য। কিন্তু প্রথম আলোতে আমি কোনদিনই বস্তুনিষ্ঠতা খুঁজে পাইনি।
প্রথম আলো পত্রিকাটি মতিউর রহমান ও আনিসুল হকের ব্যক্তিগত মতামত প্রচার করা হয়। তারা যখন যেভাবে ইচ্ছে সেভাবেই সংবাদ প্রচার করে থাকে।সংবাদে কোন বস্তুনিষ্ঠতা থাকে না। ঐ দুই ব্যক্তি তাদের পছন্দ-অপছন্দ দেশবাসীর উপর চাপিয়ে দিয়ে থাকে। আমি একটা পর্যায়ে প্রচন্ড বিরক্ত হয়ে যাই।
কিন্তু কোন বিকল্পও পাচ্ছিলাম না।
অবশেষে আস্তে আস্তে অনলাইন পত্রিকার দিকে ঝুকে পরলাম। বিডিনিউজ২৪.কম প্রথম আলোর চেয়ে বেশী ‘মৌলবাদী’ একটা পত্রিকা। আমি ওটাকে বর্জন করা শুরু কলাম।
২০১০ সালে চিন্তা করলাম, আমার দেয়া দৈনিক ১০ টাকায় প্রথম আলোর প্রকাশনা চলে। আমার উচিৎ নয় এসব আবর্জনাকে দৈনিক ১০ টাকা করে সাপোর্ট করা। বাসায় ও অফিসে পত্রিকার নেয়া বন্ধ করে দিলাম। একটা বুদ্ধি খাটালাম, ই-প্রথম আলো নামের অনলাইন সাইটে হার্ড কপির মতোই পত্রিকাটি দেখা যায়। প্রয়োজনীয় বিজ্ঞাপন অনলাইন সংস্করণ থেকেই পেয়ে যেতাম।
ভেবে দেখলাম আমার মতো আস্তে আস্তে সকলে যদি প্রথম আলো কেনা বন্ধ করে দেয়- একদিন নিশ্চয়ই এটার একটা ‘ইমপেক্ট’ পড়বে ওদের প্রকাশনায়।
একজন একজন করেই সকলকে সচেতন হতে হবে।
আমি ২০০৯ সালের পর থেকে বাংলাদেশের কোন টেলিভিশন চ্যানেল দেখি না। ঘৃণা হয় দেখতে। ওসব আবর্জনা। হুমায়ন আহমেদ মারা যাবার পর বাংলাদেশে কোন দেখার মতো নাটক বা সিনেমা তৈরী হয়েছে বলেও শোনা যায় না।
দেশটি এখন টক-শো নির্ভর।
আর টক-শোতে সব সরকারী দালালদের জোর উপস্থিতি। ড. পিয়াস করিম সাহেব মারা যাবার পর সত্য কথা বলার মতো কাউকেই টিভি পর্দায় দেখা যায় না।
বাংলাদেশের সাংবাদিকগুলি ভয়াবহ রকমের অসভ্য।
এই পৃথিবীতে এরচে নিম্নরূচির কোন মানুষ হয় বলে আমি বিশ্বাস করি না।
জাফর ইকবাল, মুনতাসির মামুন, শাহরিয়ার কবিরদের মত অমানুষরা যে দেশের বুদ্ধিজীবি বলে দাবীদার- সেদেশ মানুষের দেশ হতে পারে না; হওয়া সম্ভব নয়।
শাহবাগের তথাকথিত গণজাগরণ মঞ্চ নিয়ে টিভি ও পত্রিকাগুলির অশ্লীলতা বাংলাদেশের সাংবাদিকতার মান কোথায় গিয়ে পৌচেছে তা যে কারো চোখে আংগুল দিয়ে বুঝিয়ে দেয়। টিভি চ্যানেলগুলিকে দেখলাম তারাও শাহবাগের কথায় উঠে আর বসে!
আজ শেখ হাসিনার রামপাল নিয়ে ভাষনের কিছু অংশ দেখলাম।
শেখ হাসিনার বাক্যচায়ন দেখে আমি সত্যিই হতবাক। সে নাকি একটা দেশের প্রধানমন্ত্রী!
তারচেও অবাক হলাম এই মহিলার বাবা শেখ মুজিব। শেখ মুজিবের যত দোষই থাকুক- তার ভাষনের ভক্ত আমি নিজেও। অথচ তারই কন্যা বলে পরিচিত শেখ হাসিনার মুখের ভাষার ব্যবহার শুনে আমি আজ অনেকক্ষন ভাবলাম- সত্যিই সে শেখ মুজিবের কন্যা?
– না কি অন্য কিছু রয়েছে তার জন্মে, তার বাবার মতোই!
বাসার কাজের বুয়াদের মুখের ভাষাও এরচে সুন্দর।
কার্বন দিয়ে নাকি এই মহিলা ফেসওয়াস না ফেসক্রীম বানাবে!
তার অটিজম ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয় বর্তমান পৃথিবীর সবচে বেশী বেতনে চাকুরী করে। সে বাংলাদেশের মানুষের কষ্টের টাকা থেকে মাসে ১ কোটি ৬০ লক্ষ টাকার সমপরিমান (দুই লাখ ডলার) বেতন গ্রহণ করে ফরেন কারেন্সীতে। অপরদিকে শেখ হাসিনা বাকী জীবন ক্ষমতায় থাকার স্বপ্নে বিভোর!
শেখ হাসিনা ২০০১ সালে ক্ষমতা ছাড়ার আগ দিয়ে ‘গণভবন’ তার নিজ নামে লিখে নিয়েছিলেন। ধানমন্ডির ৬ এ আরও একটা বাড়ী তার বোন শেখ রেহানাকে লিখে দিয়েছিলেন। এবং আজীবন রাষ্ট্রিয় ভাতা ও এসএসএফ নিরাপত্তা পাবার আইন করে গিয়েছিলেন।
বাংলাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলনে যেভাবেই হোক শেখ মুজিবের অবদান অনষিকার্য। কিন্তু স্বাধীনতার পরবর্তী ৭২ থেকে ৭৫ পর্যন্ত তার দুঃশাসন ক্ষমার অযোগ্য। তার অপশাসনের পরিণতি শেখ মুজিব ভোগ করেছেন।
কিন্তু এখন শেখ হাসিনা যে খেলা খেলছেন দেশটাকে নিয়ে- তার পরিণতি কি হবে?
এবং গতকাল তামাশার চুড়ান্ত দেখলাম দেশের কথিত সিনিয়র সাংবাদিকদের সংগে অবৈধ গোপালগঞ্জ সরকারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বেহাল্লাপনায়।
দেশের পুলিশের আইজি রাজনৈতিক ভাষায় কথা বলছে! সন্ত্রাসী পুলিশ বাহিনী যখন যাকে মন চাচ্ছে খুন করে যাচ্ছে! আর এক প্রধান বিচারপতি যখন যা মুখে আসে তাই বলে যাচ্ছে নিদির্ধায়! সাংবাদিকরা হয়ে রয়েছে সব গৃহপালিত পশু! যেমন প্রধানমন্ত্রী ঠিক তেমনি দেশের সাংবাদিক!
একটা দেশ এতটা নীচেও নামতে পারে?