চায়না বর্তমান বিশ্বের দ্বিতীয় সুপার-পাওয়ার।
যৌক্তিক বোঝাপড়া রাখতে পারলে চায়না তার প্রতিবেশীদের সংগে ভালো আচরণ করে। হ্যাঁ, চায়না ‘অর্থনৈতিক রাজনীতি’ করে- সেটা সকলেই করে, আমি নিজেও করি, আপনিও করেন (আপনি নিজে না খেয়ে থেকে প্রতিবেশীর বাড়ীতে বাজার করে নিয়ে যান না); এবং সেটা নিয়ে খেলাও যায়, টক্কর দেয়াও যায়- যদি নিজেদের মাথায় কিছু ঘিলু থাকে।
কিন্তু ভারত যেটা করে সেটা রীতিমতো নোংড়ামো।ভারতের কোন প্রতিবেশী বন্ধুরাষ্ট্র নেই। ভারত তার সব প্রতিবেশী দেশের সংগেই নোংড়ামীর খেলা খেলে। ভারতের প্রতিবেশী একমাত্র হিন্দু রাষ্ট্র নেপাল পর্যন্ত হিন্দুত্ববাদী ভারতকে ঘৃণা করে।
ভারত তাদের ‘র’ আর ‘সাউথ ব্লক’কে দায়িত্ব-ই দিয়েছে প্রতিবেশী দেশগুলোর সংগে নোংড়া রাজনীতির খেলা খেলে তাদের দাবিয়ে রাখতে। এদের অন্য দ্বিতীয় কোন কাজ নেই।
এরা নিজেরাই তিন বেলা খাবার পায় না, রাস্তা-ঘাটে মলমুত্র ত্যাগ করে- তাদের জীবনের কোন স্ট্যান্ডার্ড নেই। শুধুই বিশাল শরীরের জোড়ে ছোটদের ল্যাং মারতে চায়।
চায়নার মাধ্যমে হলেও ভারতকে থামানো দরকার। ভারতকে সুসভ্য, সুপ্রতিবেশী হতে হবে।
একটি গল্প বলি।এক সময়ের সুপারপাওয়ার সোভিয়েট ইওনিয়ন।
আমেরিকান চালে দেশটি ছিন্ন-ভিন্ন হয়ে গেল। বিশাল সোভিয়েট ইওনিয়ন ভেংগে তৈরী হলো প্রায় ১৫ টি নতুন দেশ। কিন্তু ঠিকই সেই বিশালতা নিয়ে, সোভিয়েট প্রতিপত্তি নিয়ে ইউএসএসআর এর উত্তরাধিকারিত্ব পেল ‘রাশিয়ান ফেডারেশন’ নামের দেশটি।
রাশিয়া স্বাধীন দেশ; সেই ১৫টি নতুন দেশও স্বাধীন দেশ। আজ রাশিয়ার যে বিশাল মহাকাশ ল্যান্ডিংটি রয়েছে সেটির অবস্থান নতুন দেশ কাজাখাস্তানে। এখনও সেখান থেকেই পরিচালিত হচ্ছে সুন্দরভাবে।
রাশিয়া অস্ত্র তৈরী, পরমানু অস্ত্রও রয়েছে, মহাকাশ গবেষনায় অগ্রগামী একটি দেশ যার রয়েছে বিশাল তেলভান্ডার এবং অল্পকিছু জনসংখ্যা নিয়ে বিশ্বের সবচে বড় ভুখন্ডের মালিকানা।
এর বাইরে রাশিয়ার চিকিৎসাব্যবস্থাটি আটলানটিক এর এপাড়ে ইওরোপকে পেছনে ফেলে সেরা চিকিৎসা ব্যবস্থা হিসাবেই পরিগণিত। সেই রাশিয়া তার প্রতিবেশীদের পেছনে তাদের পররাষ্ট্রমন্ত্রণলায় বা তাদের স্পাই এজেন্সীকে ২৪-ঘন্টা লাগিয়ে রাখেনি।
কারণ রাশিয়া জানে যে ‘বড়’ হতে হলে সেরাটার সংগে প্রতিযোগীতা করতে হয়। তারা আমেরিকার সংগেই টক্কর দেয়, ইউক্রেন, উজবেকিস্তান এর সংগে নয়।
যাই হোক, সোভিয়েট ইওনিয়ন থেকে মুক্তি পাওয়া উজবেকিস্তান একটি অতি দরিদ্র দেশ। অন্য ১৪-টি দেশও গরীব দেশের তালিকাতেই পড়ে।
কিন্তু বড় দেশ রাশিয়ার একটি মজার আইন রয়েছে। সাবেক সোভিয়েট ইওনিয়নভূক্ত ১৫টি দেশের যে-কোন নাগরিক যদি ‘রুশ’ ভাষায় কথা বলতে/ লিখতে পারে- তাহলে সে চাওয়ামাত্র তাকে রাশিয়ান পাসপোর্টসহ নাগরিকত্ব দিয়ে রাশান ভূখন্ডে নিয়ে আসা হয়।
ভারত-বর্ষের উত্তরাধিকার পাকিস্তান বা বাংলাদেশ নয়; বরং হিন্দুস্তান (ইন্ডিয়া)-ই বৃটিশ-ভারতে আসল উত্তরাধিকার। এমনকি নেপাল, শ্রী লংকা, মালদ্ভিবস, মিয়ানমার, মালয়েশিয়া পর্যন্ত শাসিত হয়েছে বৃটিশ-ভারতের রাজধানী কলকাতা (এবং পরে) বা নয়াদিল্লী থেকে। মিয়ানমারের মুদ্রাও নিয়ন্ত্রণ করতো ভারতীয় রিজার্ভ ব্যাংক।
সেই ভারত-রাষ্ট্রটি কি কখনও সোভিয়েট উত্তরাধিকার রাশিয়ার কাছ থেকে ‘নাগরিকত্ব’ আইনটির মতো নিজস্ব একটি আইন তৈরীর চিন্তা করেছে কখনও?
ওরকম চিন্তা করতে ‘বড়’ একটা মন থাকা লাগে।ভারত শুধু একটি কথাই বুঝে না বা শিখে নি যে- ‘বড় হতে হলে বড় একটি মন সবার আগে দরকার’।
ভারত যদি সভ্য দেশ হতো, তাহলে তারাও রাশিয়ার মতোই একটি আইন করতে পারতো যে, বৃটিশ ভারত শাসিত ভুখন্ডের যে-কোন দেশের নির্ধারিত কিছু শর্ত পূরণ সাপেক্ষে ভারতীয় নাগরিকত্ব পাবে। কিন্তু তা না করে আজ ভারত নিজ দেশের মানুষদের নাগরিকত্ব নিয়েই খেলা করে চলছে, তাদের অনাগরিক বানিয়ে দিচ্ছে!
সে যাকগে, তাই বলে ভারত এমন কোন ‘রসগোল্লা’ না যে ওরম কোন আইন (রাশিয়ার মতো) তৈরী হলেই শতশত অভারতীয় হিন্দুস্তানের নাগরিকত্বের জন্য লাইন দিবে।
শ্রী লংকা, ভুটান, বাংলাদেশ, পাকিস্তান বা মালদ্ভিবসের নাগরিকরা ভারতীয়দের চেয়ে যথেষ্ঠ ভালোই সুযোগ-সুবিধা ভোগ করে শুধুমাত্র কিছুটা বাড়তি গণতন্ত্র ও উন্নত চিকিৎসা ব্যবস্থা ব্যতীত। অবশ্যি ভারতের সেঈ অহংকারের গণতন্ত্রকে নরেন্দ্র মোদী প্রশ্নবিদ্ধ করে ফেলেছে!
যাই হোক, ভারতকে তার অনৈতিক দাদাগিড়ি থামাতে হবে। ভারতকে সুপ্রতিবেশী দেশ হতে হবে। ভারতকে সুসভ্য দেশ হতে হবে। ভারতকে অন্য দেশের অভ্যন্তরিন, রাজনৈতিক, সামাজিক ও ধর্মীয় বিষয়ে নাক গলানো চিরতরে বন্ধ করতে হবে। ভারতকে প্রতিবেশীদের সম্মান করা শিখতে হবে।
এসব বিষয়গুলি নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত ভারতের সংগে কোন বন্ধুত্ব হতে পারে না।
এসব বিষয়গুলি নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত ভারতের সংগে যে-কোন তৃতীয় দেশের যুদ্ধে আমরা ভারতের বিপক্ষ সমর্থন করবো। হোক না সেই তৃতীয় ‘বিপক্ষ দেশটি’ দেশটি নেপাল, ভুটান, চায়না বা পাকিস্তান- আমাদের আন্তরিক সমর্থন তাদের প্রতি থাকবে।
বাংলাদেশের ‘অনির্বাচিত সরকার’ নয় বরং আমরা ১৭ কোটি নাগরিকদের সমর্থনই আসল সমর্থন।
একমাত্র ‘সুসভ্য ভারত’ই আমাদের সমর্থন পাবে, ‘অসভ্য ভারত’ নয়।
আর এসব বিষয়ে সাধারণ ভারতীয় ভাই-বোন-বন্ধুদেরও অনুরোধ করবো- আপনাদের সরকারকে সুসভ্য সরকার হতে বাধ্য করুন।