ভিসা


গত বছরের কথা।

কোভিড পেন্ডামিকের জরুরী অবস্থা চলছে পুরো বিশ্বে।

কিন্তু আমার ইন্ডিয়া যাওয়াটা হঠাৎ খুব জরুরী হয়ে গেল।

নিউ ইয়র্কের ভারতীয় কনসুলেটও বন্ধ; ভারত শুধুমাত্র জরুরী ব্যবসায়িক ও চিকিৎসা ভিসা চালু রেখেছিলো তখন।

ভারতীয় কনসুলেটে ইমেইল পাঠালাম, আমার ভিসা লাগবে।

ফিরতি ইমেইলে আমাকে ওরা বেশ গুছিয়ে জানিয়ে দিলো কিভাবে আবেদন করতে হবে। অনলাইনে আবেদন সাবমিট করে সামান্য কিছু টাকার মানি অর্ডার এবং অরিজিনাল পাসপোর্টটি ফিরতি শিপিং লেভেলসহ মেইল করে দিলাম ওদের ঠিকানায়। মাত্র ৭ দিন পর দেখি ওরা মেইলে আমার ডাবল এন্ট্রি ভিসাসহ পাসপোর্ট পাঠিয়ে দিয়েছে। ওদের সার্ভিসটা বেশ ভালো লাগলো।

আমেরিকায় (নন ইউএস সিটিজেন) বসবাসকারীদের বিশ্বের যে-কোন দেশই খুব সহজে এবং যদ্দুর সম্ভব ঝামেলা এড়িয়ে ভিসা দিয়ে দেয়। এমনকি ভিএসএফ মাধ্যমে ভারত যে নিয়মিত ভিসা সার্ভিস দিয়ে আসছে তাদের ‘আচরণ’ আমেরিকান স্ট্যান্ডার্ডেই (অথচ ঢাকায় স্টেট ব্যাংক অব ইন্ডিয়া চামারের মাতো ব্যবহার করে বাংলাদেশী ভিসা আবেদনকারীদের সংগে)।

ইউকের ভিসা নিবো। ওদের ওয়েব পোর্টাল থেকে আবেদন করলাম, তারপর আমেরিকার এপ্লিকেশন সাপোর্ট সেন্টার-এ গিয়ে বায়োমেট্রিক দিয়ে আসলাম এবং মুল পাসপোর্টটি ওদের মেইল করে দিলাম। ১ সপ্তাহ পর আমার বাসার ঠিকানায় মেইলে ইউকে এন্ট্রি পারমিটসহ আমার পাসপোর্ট এসে উপস্থিত। তবে বৃটিশদের ভিসার খরচ অনেক বেশী বলেই মনে হলো। দেশটি আর্থিক মন্দায় আছে জানি, কিন্তু তাই বলে ভিসা বিক্রি করে খেতে হবে? এটা কোন কথা!

আমেরিকায় বসবাস করলে পৃথিবীটাকে খুবই সহজ মনে হয়।

ব্রাজিলের ভিসা নিবো, গত বছরই।

অনলাইনে ওদের পোর্টাল থেকে আবেদন করলাম। ওরা আমাকে ইমেইলে যোগাযোগ করে এপয়েন্টমেন্ট দিলো। সামান্য কিছু টাকা আর পাসপোর্ট নিয়ে গেলাম ওদের কনসুলেটে। ঘড়ির কাটা ধরে ঠিক ৪৫ মিনিট বসেছিলাম- এর মধ্যেই ওরা আমার পাসপোর্টে ভিসার স্টিকার লাগিয়ে হাতে হাতে দিয়ে দিলো। দারুণ সার্ভিস। আমি অভিভূত।

সবচে বেশী ঝামেলা করেছে প্যারাগুয়ে।

ওদের মাথা পিছু বার্ষিক আর ৫,৬১৫ ডলার; আর বাংলাদেশের ২,৭৩৪ ডলার। কিন্তু আমি তো বাংলাদেশে থাকি না; আমেরিকান রেসিডেন্স। কিন্তু তাতে কে? বাংলাদেশী পাসপোর্ট বলে কথা। বাংলাদেশ ওদের কাছে রেস্ট্রিকটেড কান্ট্রি। বাংলাদেশীদের নাকি ওরা ভিসা দিতেই চায় না। বাংলাদেশীদের ভিসা দিতে ওরা পুরো ফাইলটি রিভিওসহ রাজধানী আসুনসিয়ানে পাঠিয়ে দেয় এবং আসুনসিয়ান থেকে সিদ্ধান্ত হয়।

যাই হোক, আমি তো জানিই যে আমাকে ভিসা দিবে। তাই বিষয়টা নিয়ে কোনও টেনশন করছিলাম না। কনসুলেটের ভিসা অফিসার আমার অরজিনাল পাসপোর্টটি জমা রাখতে চাইলো; কিন্তু আমি বললাম যেহেতু তোমাদের সিদ্ধান্ত নিতে দেরী হবে সেহেতু আমি তোমার কাছে আমার পাসপোর্ট আটকিয়ে রাখতে দিতে পারি না। আবেদন থাকলো, তোমরা সিদ্ধান্ত নাও তারপর আমাকে ফোনে বা ইমেইলে জানালে আমি পাসপোর্ট নিয়ে আবারও আসবো, তখন না হয় স্টিকার লাগিয়ে দিও। ভিসা অফিসার রাজী হলেন।

দীর্ঘ ৪ মাস পর প্যারাগুয়ের কনসুলেট থেকে ভিসা এপ্রুভালের কনফার্মেশন ইমেইল পেয়ে ওদের অফিসে গিয়ে দিনে দিনে ভিসার স্টিকার লাগিয়ে নিয়ে আসলাম।

তবে, সবচে বেশী ’অসভ্যতা’ করে সৌদী আরব। ‘নন ইউএস সিটিজেন’ বলে আমেরিকায় যে মিলিয়ন মিলিয়ন মানুষ বা মুসলিম বসবাস করছে – সেটা ওরা হয়তো জানেই না। আমেরিকান পাসপোর্ট হোল্ডারদের সৌদী আরবের ভিসা না নিলেও চলে, অন এরাইভাল ভিসা পাওয়া যায়; আর কেউ এডভান্স ভিসা নিতে চাইলে ওরা অনলাইনেই ১০ মিনিটের মধ্যে ১ বছরের মাল্টিপল ভিসা দিয়ে দেয়। কাগজে কললে ‘নন ইউএস সিটিজেন’ এবং যাদের পাসপোর্টে আমেরিকা, ক্যানাডা, ইওরোপ, অস্ট্রেলিয়া বা বৃটিশ ভিসা থাকে তাদেরও সৌদী আরব ‘অন এরাইভাল ভিসা’ দেয় বলে উল্লেখ রয়েছে।

কিন্তু আমি আরাবিয়ানদের বিষয়ে খুবই সতর্ক থাকি – ওরা গাধা, ওরা মুর্খ, ওরা উগ্র এবং ওরা অনারাবদের মানুষই মনে করে না; যদিও ওরা ‘অনারব’ সাদা মানুষদের পা-চাটতে খুবই আনন্দ পায়। কথাগুলো বাস্তব অভিজ্ঞতা থেকে বললাম। আর আরাবিয়ানদের মধ্যে সবচে উগ্র, বেয়াদব এবং অহংকারী মনে হয়েছে কাতারিদের। আরব জাতি আদৌ কোনদিন সুসভ্য মানুষ হতে পারবে বলে আমি অন্তত বিশ্বাস করি না।

আমার মতো একজন মানুষ সৌদী আরবের ওমরাহ ভিসা নিতে প্রায় টানা ২-মাস চেস্টা করে ক্লান্ত হয়েছি। অবশেষে প্রায় ৮৫০ ডলার খরচ করে ওমরাহ ভিসা নিতে পেরেছিলাম। যদিও আমি জানি সৌদীর ভিসা এজেন্টরা ওমরাহ ভিসা করাতে অফিসিয়ালি ৬৫০ ডলার সার্ভিস চার্জ নিয়ে থাকে। এমনকি ওরা গ্রুপ ছাড়া ভিসা দিতে অনিহা প্রকাশ করে। তেল বেঁচে খাওয়া এই দেশটি হজ্বের ভিসা বিক্রি করে সেই অর্থ দিয়ে আনন্দ-ফূর্তিতে সময় পার করে চলছে!

সেদিন থাইল্যান্ডের ভিসা নিলাম। অনলাইনে সব ডকিউমেন্টস দিলাম, পেমেন্টও করলাম ক্রেডিট কার্ড দিয়ে; ওরা ইমেইলেই আমাকে ৬ মাসের মাল্টিপল ভিসা দিয়ে দিলো।

ফিলিপিন্সের ভিসার জন্য আবেদন করলাম। অনলাইনে সব ডকিউমেন্টস সাবমিট করেছিলাম; আজ ফ্রি এপয়েন্টমেন্ট নিয়ে গেলাম ওদের কনসুলেটে। ফিলিপিন্সের লোকজন অত্যন্ত ভদ্র এবং হাসিখুশী। আমি এক্সপাডাইট ফি জমা দেয়ায় ভিসা অফিসার খুবই চেস্টা করছিলো আমাকে আজই ভিসা দিয়ে দিতে, যদিও বলা আছে ২/৩ দিন সময় লাগবে। যাই হোক, আজ দিতে পারেনি হয়তো কালই দিবে।

কিন্তু আমি বাসায় ফিরে আমার টিকেট ভালোমতো চেক করতে গিয়ে দেখলাম (জেদ্দা এয়ারপোর্টে ভ্রমণের তিক্ত অভিজ্ঞতার আলোকে) যে, ম্যানিলা এয়ারপোর্টে টার্মিনাল টু টার্মিনাল কানেকটিভিটি নেই! অর্থাৎ আমাকে ইমিগ্রেশনে এন্ট্রি নিয়ে তারপর ট্রান্সফার নিতে হবে।

বিষয়টি জানিয়ে ফিলিপিন্স কনসুলেটে বললাম, আমাকে সম্ভব হলে ডাবল এন্ট্রি ভিসা দাও। কারণ তোমার দেশে তো এয়ারপোর্টে ইন্টারন্যাশনাল এরিয়াতে প্যাসেঞ্জারদের টার্মিনাল টু টার্মিনাল কানেকটিভিটিজ নেই।

কিছুক্ষনের মধ্যেই ফিরতি ইমেইল পেলাম।

ভিসা অফিসার ‘নন-ইমিগ্রান্ট ভিসা আবেদন পত্র’ এটাস করে আমাকে বললো, তোমার আবেদিত টুরিস্ট সিংগেল এন্ট্রি ভিসা ম্যানিলা থেকে শিগগিরই এপ্রুভ হয়ে আমার হাতে চলে আসবে। তাতে কোন সমস্যা নেই, তুমি এই আবেদন পত্রটি পুরণ করে স্বাক্ষর ‍দিয়ে স্ক্যান করে আমাকে পাঠাও, আমি সব ব্যবস্থা করে দিবো।

পৃথিবীটা আদতে খুবই সহজ, যদি সবকিছুই আমরা সহজ করে দেখি।

কিন্তু সকলে কি আমরা সবকিছু সহজ করে দেখার দৃষ্টিভংগি অর্জন করতে পেরেছি?


Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *