আইপ্যাড-এ আপেল থেকে অফার আসলো- মান্থলি মাত্র ১২.৯৯ ডলারে ‘ইউটিউব রেড’ উপভোগ করা যাবে।
কোন বিজ্ঞাপন থাকবে না এবং এইচডি কোয়ালিটি ভিডিও দেখা যাবে।
সাধারণ ভার্সেনে যেসব দেখা যায় না, মানে পে করে দেখতে হয়- সেসবও সম্পূর্ণ ফ্রিতে দেখা যাবে।
ইউটিউব ওয়ালার মালিক গুগল (আলফাবেট) এমনিতেই প্রায়ই জালিয়ে খাচ্ছে মান্থলি ১০ ডলারে সাবসক্রাইব করতে। নেইনি, শুধু শুধু টাকাটা নষ্ট হবে, তাছাড়া আমি গানে-বাজনা দেখার তেমন একটা সময়ও পাই না।
কিন্তু আপেলওয়ালা যখন অফারটা দিল এবং সংগে বলে দিল, ‘একটা মাস একটু ফ্রিতে পরখ করে দেখই না বাছা- ভালো না লাগলে ৩০ দিনের মধ্যে তোমার সাবক্রিপশনটা বাতিল করে দিতে তো পারবেই।’
তখন আর চিন্তা কিসের টাকা ছাড়া যদি দেখা যায়, তো- সেটাই তো ভালো।
তাছাড়া আমি তো শুধু শুধু সাবক্রাইব করবোই না- সময় কৈ?
তারচে বরং একটা মাস দেখিই না একটু ফ্রিতে ।
অতপর গেল সপ্তাহে – আইপ্যাডে সাবসক্রাইবটা করেই ফেললাম।
এবং যা হবার তাই হলো।
ভুলেই গেলাম যে আমি ‘ইউটিউব রেড’ সাবসক্রাইব করেছি।
গত পরশু হঠাৎ কি একটা গান শুনতে ইচ্ছে হলো- বাসার ডেস্কটপ কমপিউটারে ইউটিউবে ঢুকেই দেখি এটাও ‘ইউটিউব রেড’ হয়ে বসে রয়েছে।
গুগল এর এই একটা সুবিধে।
একটা কিছু করলেই সংগে সংগে সেটা আমার আইপ্যাড, আইফোন, বাসার ডেস্কটপ, অফিসের ল্যাপটপ এমনকি টেলিভিশনে পর্যন্ত সেইম আপডেট চলে আসে।
আমি মেয়ে হলে সুন্দর করে বললাম, ‘ইস্ কত্ত কিউট! থ্যাংকয়্যূ গুগল ভাইয়া!’
তাছাড়া আমেরিকায় এটাও দারুন একটা মজা।
এদেশে প্রায় সব সার্ভিস কোম্পানী গুলিই গ্রাহককে মজার মজার অফার দেয়। যেমন আপনি একটা আইফোন সেভেন প্লাস কিনবেন ‘ভ্যারাইজন’ থেকে। তো, ওরা আপনাকে বলবে কি- ‘তোমরা নিয়ে নাও। মাসখানেক চালিয়ে দেখ কেমন লাগছে- ভাল না লাগলে ফোনটা ফেরত দিয়ে দাও; কোন চার্জও তোমার কাটবো না- মামলা ডিসমিস।’
সুতরাং আপনি যদি চান, ২৯ দিন ইউজ করে ফেরত দিয়ে দিতে পারেন।
কোন ব্যাপারই না।
আবার ধরুন আপনি এটিএন্ডটি ব্যবহার করছেন মান্থলী ৪০ টাকা দিয়ে। স্পিরিন্ট আপনাকে অফার দিয়ে বসবে, ‘ধুর মশাই কিসের এটিএন্ডটি! চলে আসুন স্পিন্টে, আপনার জন্য জামাই আদর। মাত্র ২০ টাকা করে দিয়েন।’
কত্ত মজা!
সে যাই হোক। নায়ক রাজ রাজ্জাক মারা গেলেন আজই। ওনার জন্য মায়াই লাগছিল। হঠাৎই ওনার সেই গানটা মনে আসলো, ওই যে- ‘নীল আকাশের নীচেই আমি ডা ডা ডা ডা …’
শুয়েই পড়েছিলাম তখন। রাত প্রায় দেড়টা বাজে। আইপ্যাডে ইউটিউব রেড টাচ করলাম। নীল আকাল লিখতেই মুভিটা সামনে চলে আসলো। এবার রান করলাম।
১৯৯৩ সালের পর বাংলাদেশে নির্মিত কোন বাংলা মুভি আমি আর দেখিনি। সব সিনেমার একই গল্প। নতুন কিছু যেহেতু নেই- সুতরাং সময় নষ্ট করে কি হবে!
হুমায়ূন আহমেদ এর মুভি এই হিসাবের বাইরে।
কোলকাতায় নির্মিত বেশ কয়েকটা বাংলা মুভি অবশ্য আমি দেখেছি এমনকি এখনও মাঝে মধ্যে খুব বেশী ফ্রি থাকলে এবং ইংলিশ মুভি দেখতে মন না টানলে- দেখি।
প্রায় সোয়া দুই বা আড়াই ঘন্টা সময় নিয়ে পুরো মুভিটাই দেখলাম।
রাজ্জাক কবরী আনোয়ার হোসেন সুচন্দা এই কয়জনকে তো ভালই চিনি। কিন্তু আরও প্রায় অনেকগুলো চরিত্রাভিনেতাদের চেহারাটা পরিস্কার মনে আছে কিন্তু কারোরই নাম মিলাতে পারিনি।
ইদানিং স্মৃতিগুলিও বিট্রে করা শুরু করেছে।
আসলে বুড়ো হয়ে গেছি।
মৃনাল সেন এর ডিরেকশনে নির্মিত ‘নীল আকাশের নীচে’ ছবিটি রিলিজ হয় ১৯৫৯ সালে কোলকাতায়, বাংলায়।
অপর দিকে ১৯৬৯ সালে ইষ্ট পাকিস্তান (ঢাকা) থেকে ‘নীল আকাশের নীচে’ রিলিজ হয়, এটা মিতা’র ছবি। রাজ্জাক ও কবরী এটাতে অভিনয় করেছেন।
আমি আমাদের ইষ্ট পাকিস্তানের নীল আকাশের নীচেটাই দেখছিলাম।
আমার জন্ম এই ছবিটা রিলিজ পাবারও প্রায় ৪/৫ বছর পর।
সুতরাং আমার জন্মেরও আগে আমাদের ঢাকা শহরটি, শহরের রাস্তাঘাট, তৎকালীন ট্যাক্সি সার্ভিস, হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টাল ইত্যাদি সবকিছুই দেখার সুযোগ হলো।
ঢাকার সরু পিচঢালাই রাস্তায় ইটালীর বিখ্যাত সেই পিয়াজিও থ্রি হুইলার, হলিউডের ওয়েষ্টার্ণ মুভিতে দেখা সেই গাড়ীগুলি দেখে খুব শান্তি পেল আমার এই অতৃপ্ত চোখ।
ঢাকা শহরটি তখন এক্কেবারেই গ্রাম। আগের আমলের লোকদের কাছে শুনেছিলাম, আজ পরিস্কার দেখলাম। কি ফাকা একটা শহর। এখানকার ঢাকার সংগে এটার কোন মিলই নেই শুধুমাত্র শাহবাগের শেরাটন হোটেলটি ছাড়া।
নিউ মার্কেটের ওভারব্রীজটি সম্ভবত একবার দেখলাম। ওটাও অনেক পুরাতন তাহলে!
যাই হোক, রাজ্জাক আর কবরীর অভিনয় ভালই লাগলো। মুভিটা সম্ভবত ৮০’র দশকে আমি একবার দেখেছিলাম- স্মৃতিতে হালকা নাড়া দিচ্ছিল কিছু কিছু দৃশ্য। মুভিটিতে অসাধারণ বেশ কয়েকটা গান রয়েছে- এরকম গান এখন আর তৈরী হয় না।
মুভিটির কাহিনী অত্যন্ত সাদামাটা এবং বিরক্তিকর- অন্তত আমার তো দর্শকের কাছে যার চোখে শুধুই সমালোচনার ধার।
আমি যদি একব্যাক্যে ছবিটির কাহিনী ও অভিনয় মান নিয়ে মন্তব্য করি তাহলে বলবো ‘ন্যাকমী মার্কা একটা মুভি’।
আনোয়ার হোসেন সাহেব কাশতে কাশতে মুখ দিয়ে রক্তবমি করে দিবেন- এক্কেবারেই তার কমন অভিনয় এটা।
আর কত যে ন্যাকামীপূর্ণ ডায়ালগ আর অভিয়নশৈলী- হাসতে হাসতে ভিরমী খাবার যোগার হয়েছিল আমার।
ছবিটি দেখতে দেখতে ভাবছিলাম পাকিস্তান আমলে আমাদের দেশে ‘অনেকগুলি ভালো মুভি’ নির্মিত হয়েছে। এখন আর হয় না। এখন যেগুলি তৈরী হয় নাটক আর সিনেমার নামে- তারচে পশ্চিমের ডার্টি ফিল্মও অনেক রুচিসম্পন্ন।
তখনই রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের শেষের কবিতা’র কথা মনে হলো- বাংলায় একটা অসাধারণ বই লেখা হয়েছে আজ থেকে শত বর্ষ আগে। কতটা আধুনিক ছিলেন আমাদের বাংলা ভাষার এই বিশ্বকবি।
আর ভাবছিলাম আজ থেকে ৬০০ (বেসিকেলি ১৫৮৯ থেকে ১৬১৩ সালের মধ্যে) বছর আগে উইলিয়াম সেক্সপিয়র সনেট লিখেছেন, লিখেছেন হেমলেট, ওথেলো, ম্যাকবেথ, রোমিও এন্ড জুলিয়েট।
৬০০ বছর আগে আমরা যেন কোথায় ছিলাম গো!
তারপরও আমাদের এই ভুখন্ডের হিসাবে রাজ্জাককে অগ্রসরই মনে হলো।
ভালো থাকুন নায়ক রাজ।
ওহ হ্যা। শেষটায় বলতেই হবে, আমি সত্যিই ইউটিউব রেড এর পুরোপুরি প্রেমে আটকে গেছি। সত্যিই অনন্যসাধারণ সার্ভিস। কি যে ঝকঝকে তকতকে বিজ্ঞাপন ছাড়া গান, মিউজিক আর মুভির সমাহার এখানে- ১২.৯৯ ডলার তো নস্যি সে তুলনায়।