বড়-হার্ট


শেখ মুজিবুর রহমানের সত্যি সত্যি বিশাল একটা হার্ট ছিল।
 
সকাল বিকেল প্রতিদিন নিয়ম করে দুই ঘন্টা সময় নিয়ে (সাবওয়ে ট্রেনে আসা-যাওয়ায়) ওনার লেখা প্রায় সাড়ে তিনশত পৃষ্ঠার মোটা ও লম্বা বইটা (মুলতঃ ডায়েরী) পড়ে যাচ্ছি। অনেক কিছু জানতে পারছি ওনার নিজের জবানবন্দিতে- যা ওনার চাটুকাররা কোনদিনও বলতে সাহস করেনি, তারা শুধু প্রশংসা বাক্যই উৎরিয়েছে এযাবতকাল- যুক্তি, বাস্তবতা ও প্রকৃত তথ্য এড়িয়ে অথবা না জেনে।
 
শেখ মুজিবুর রহমান নিঃসন্দেহে দারুন বুদ্ধিমান পুরুষ ছিলেন। এবং তিনি বুঝতেন যে পুর্ব পাকিস্তান আলাদা হলে খুবই দুর্বল এবং অসহায় হয়ে পরবে- তিনি ৬ দফায় শায়ত্বশাসন চেয়েছেন মনে প্রাণে কিন্তু পাকিস্তান ভাংতে চাননি।
 
আর তাইতো ২৫শে মার্চ গ্রেফতার হবার আগে তাজউদ্দিন এর লিখে দেয়া স্বাধীনতার ঘোষণাপত্রে স্বাক্ষর করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছিলেন। ৭ই মার্চে লাখো জনতার দাবী সত্বেও তিনি ‘স্বাধীনতা’ ঘোষনা করেননি।
 
শেখ মুজিবুর রহমানের কিন্তু সত্যি সত্যি খুবই বিশাল একটা হার্ট ছিল! কিন্তু ওনার আসল সমস্যাটা ছিল চোখে। ভদ্রলোকের দৃষ্টিশক্তি ছিল খুবই কম- দূরের কিছুই ওনি দেখতে পেতেন না।
 
শুধুই ওনার সামনে এসে যারা ওনাকে একটা বড় সালাম দিতে পারতো এবং সংগে একমুঠো চাটুকারিতা ঝড়িয়ে দিতে সক্ষম হতো- ওনি শুধুমাত্র তাদেরই দেখতে পেতেন।
 
এমনকি কেউ সালাম না দিলে তাকেও দেখতে পেতেন না তিনি; এটাই ছিল ওনার চোখের সমস্যা!
 
আর তাইতো সারাদেশের আওয়ামী লীগাররা ছিল শেখ মুজিবের অন্তঃপ্রাণ। ডাকাতি, খুন, ধর্ষন, ভুমি দখল ইত্যাদি যা খুশী করে দুই বালতি ভরে তাজা মাছ নিয়ে ৩২ নাম্বারের বাড়ীতে এসে শেখ সাহেবকে একটা ‘বড় সালাম’ দিলেই তিনি বুঝে ফেলতেন ‘এ তো অনেক ভালো মানুষ!’
 
ব্যস, তার ভাগ্য আরও খুলে গেল! এরপর সে আরও দুর্দান্ত প্রতাপে ‘শেখ সাহেবের লোক’ হিসাবে তার ধর্ষন, খুন, ডাকাতি বা ভূমি দখল দ্বিগুন মাত্রায় বাড়িয়ে দিতো।
 
শেখ মুজিবুর রহমানের চোখের সমস্যাজনিত কারণে তিনি ক্ষতিগ্রস্থদের দেখতে পেতেন না।
 
আওয়ামী নেতাদের নির্যাতনের শিকার ভিকটিম বা ক্ষতিগ্রস্থরা যেহেতু ‘তেল মর্দন’ জানতো না, অথবা ৩২ নম্বরের ‘বড় হৃদয়ের মানুষটির বাড়ী’ও এড়িয়ে চলতো- কাজেই শেখ মুজিবর রহমান সাহেব তাদের দেখতেও পেতেন না।
 
দেশের ৮০ ভাগ গরীব মানুষ শেখ মুজবুর রহমানের হৃদয়ে ছিল কিন্তু চোখে তিনি তাদের সত্যিই দেখতে পেতেন না। তিনি দেখতেন শুধুই বাকী ২০% আওয়ামী লীগারদের- যারা তার সামনে দিয়ে দিনে-রাতে ঘোরাফেরা করতো এবং তার জন্য বড় বড় উপহার নিয়ে আসতো। শেখ মুজিবুর রহমান তার বিশাল হৃদয় দিয়ে তাদের প্রতিদান দিতেন।
 
তার কাছে আসা কোন চাটুকারকেই তিনি কোনদিন খালি হাতে ফেরাননি।
 
আর ঠিক সে কারণে তিনি তার প্রেসিডেন্ট, বা প্রধানমন্ত্রী অথবা আবারও বাকশালীয় প্রেসিডেন্ট হয়েও (মাত্র আড়াই বছরে ৩বার নিজের পদবী পরিবর্তিত করে) ‘অফিস’ না করে গণভবনেই বসে থাকতেন চাটুকার বেষ্টিত হয়ে- আনন্দ পেতেন কাছে ছুটে আসা মানুষগুলির জন্য কিছু করতে। কিন্তু দেশের ৮০% মানুষ যারা বসবাস করতো সেই হাতিয়া, কুরিগ্রাম, চাপাই-নবাবগঞ্জ বা নদীর ওপারে জিঞ্জিরাতেও- তিনি তাদের কথা ভুলেও মনে করতেন না।
 
প্রশাসনিক কাজে তো চোখ দরকার হয়- কিন্তু ওনার তো ছিল শুধুই একটা ‘বড়-হার্ট’, তাই প্রশাসন নিয়ে তিনি ভাবতেন না।
 
চোখেই তো দেখতেন না- তো কি করার আছে?
 
‘বড় হার্ট’ কি কিছু দেখতে পায়? হার্টে তো শুধুই থাকে ভালবাসা।
 
চোখের অপর্যাপ্ত দৃষ্টিশক্তির ব্যারামে ভুগেছেন শেখ মুজিবুর রহমান।
 
দূরদৃষ্টিতো ছিলই না।
 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *