বেগম জিয়ার হ্যাপী বার্থডে


আমার এসএসসি সার্টিফিকেটসহ পাসপোর্ট এবং বাংলাদেশ ও আমেরিকার অন্যান্য নথিতে জন্ম তারিখ হিসাবে লেখা রয়েছে ৭ই আগষ্ট যদিও আমার বাস্তবিক জন্ম তারিখ ১৭ই আগষ্ট।

জন্মদিন পালনের বাহুল্য আমি পছন্দ বা অপছন্দ কোনটাই করি না।
আগে খুব কাছের বন্ধুরা (যারা জানতো) দেখা হলে বা ফোনে উইশ করতো- ব্যস ঐ পর্যন্তই।

একজন মানুষ যদি তার নিজের ‘একটি ব্যক্তিগত দিন’ কে উদযাপন করে আনন্দ পায়-ই; তাকে পেতে দিন না; আমার তো কোন সমস্যা হচ্ছে না।

২০১৪ সালের অক্টোবরে আমি আমেরিকায় চলে আসি।
ঐ বছর আমার জন্মদিনের রাতে আমার ভাগ্নি, ভাগ্নি-জামাই ও কন্যাসহ একটি কেক নিয়ে আমার বাসায় এসে আমাকে ফোন করে এবং জানতে চায় আমি কোথায়, কখন বাসায় ফিরবো।

যাই হোক রাত ১১টায় বাসায় ফিরে- জীবনে ঐদিন-ই প্রথম কেক কাটি, জন্ম দিনের কেক।

আসলে মাঝে মধ্যে এক-আধটা দিন কে ব্যস্ত জীবনের মধ্যে একটু আলাদাভাবে উদযাপনের ‘আনন্দটা’ মন্দই বা কি?

বেগম খালেদা জিয়া।
বাংলাদেশের ২বারের নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী।
প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান যদি বেগম খালেদা কে বিয়ে না করতেন- তাহলে তিনি হয়তো একজন ‘শুধুই গৃহিনী’-ই থাকতেন। ওনি ভাগ্যবতী, জিয়াউর রহমান সাহেব ওনার কৈশরেই ওনাকে বিয়ে করে ফেলেন।

পড়াশোনায় উনি এগুতে পারেনি ঠিকই কিন্তু ‘পার্সোনালিটি’তে খালেদা জিয়াকে ছাড়িয়ে যাবার মতো মহিলা বাংলাদেশে খুব কমই রয়েছে। আমি বেগম খালেদা জিয়ার পার্সোনালিটিকে শ্রদ্ধা জানাই। বেগম জিয়া জানেন একটা দেশের প্রধানমন্ত্রী হয়ে কিভাবে শব্দ উচ্চারণ করতে হয় এবং কথা বলতে হয়- যেটা শেখ হাসিনা বা তার ছেলে জয় এখনও শিখতে পারেন নি- বাকী জীবনে কোনদিন পারবে বলেও মনে হয় না।

আমি ইতিহাসের ছাত্র নই, রাজনীতিও কোনদিন করিনি।
বিএনপি, আওয়ামী লীগ, জাতিয় পার্টি বা জামায়াত- কোনদিন কোন দলকে সাপোর্ট করেছি বলে মনেও পরে না। ওদের কাউকে পছন্দও করি না। ওদের কোন নীতির সংগেই- আমার নীতি যায় না।

শেখ মুজিবর রহমান এর বিরুদ্ধে লিখি যতটা না আওয়ামী লীগের বিরোধীতা থেকে- তারচে অনেকটাই বেশী মানুষের সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য।

শেখ মুজিবের যতটুকু ব্যক্তিত্ব সত্যিই রয়েছে- আমার হাজারো লেখায়ও তাতে তার কোন ক্ষতি-বৃদ্ধি হবে না। শেখ মুজিব কোন মহামানব ছিলেন না। অতি মানবও নন। অন্য বাকী দশজন নেতার মতোই সুচতুর নেতা ছিলেন তিনি- সংগে মানুষকে কাছে নেবার অসীম ক্ষমতা, চমৎকার বাগ্মীতা ও অসাধারণ ভাষণ দিতে পারতেন তিনি।

এই কয়েকটা গুন থাকলে ‘বোকাদের দেশ’ বাংলাদেশের মানুষকে হ্যামিলিয়নের বাশিওয়ালার মতো দৌড়ের উপর রাখাটা কোন বিষয়-ই না। শেখ মুজিবর রহমান বাংলাদেশের মানুষের পালসটা বুঝতে পেরেছিলেন- এটাও ছিল তার নেতৃত্বগুণ। বাংলাদেশের মানুষের পালসই বলে দিয়েছিল একটা স্বাধীন, গণতান্ত্রিক দেশ।

কিন্তু, শেখ মুজিব সেই সদ্য স্বাধীন দেশ থেকে গণতন্ত্রকে হত্যা করতে কুন্ঠা বোধ করেননি।

আমি মাঝে মধ্যে ভেবে সত্যিই অবাক হই, ১৯৭৫ সালের ১৫ই আগষ্ট যদি শেখ মুজিব নিহত না হতেন- তাহলে বাংলাদেশটার কি হতো?

– একদলীয় বাকশালীয় সরকার, কোন গণতান্ত্রিক অধিকার বা সরকারের বিরোধীতা থাকতো না।
– এদেশে এখনও মুজিব পরিবারের শাসন চলতো এবং শেখ মুজিবের স্বাভাবিক মৃত্যু হলে তার ছেলেরা প্রেসিডেন্ট হতো।
– দেশের মানুষের কোন বাক স্বাধীনতা থাকতো না।
– দেশে সরকারী ও গৃহপালিত মিডিয়া ছাড়া অন্য কিছুই থাকতো না।
– চিত্ত বিনোদনও থাকতো নিয়ন্ত্রিত।
– ফেসবুক, টুইটার, ইন্টারনেট ব্যবহার বন্ধ থাকতো। (উত্তর কোরিয়া ও চায়না’য় এখনও ফেসবুক বন্ধ রয়েছে)
– বাংলাদেশ থাকতো স্যাটেলাইট টেলিভিশন বা এফএম রেডিও মুক্ত।
– এবং বাংলাদেশ বর্হিবিশ্বের কাছে একটা ‘অন্ধকার জগৎ’ হিসাবেই পরিচিত পেত। বাংলাদেশের মানুষকে দেখলে বিদেশীরা ‘একটু বেশী সতর্ক’ দৃষ্টিপাত করতো।

খুব সুন্দর হতো আমাদের বাংলাদেশটা; তাই তো?
এবং গতকাল যেহেতু শেখ মুজিবকে ‘নবী’ ডিক্লিয়ার দেয়াই হয়েছে- সেটা বিগত আশির দশকেই ঘোষিত ও কার্যকর হয়ে যেত।

অতি চমৎকার একটা বাংলাদেশ আমরা দেখতে পেতাম!
আর সারা দেশের মানুষ ‘জাতির পাপা, জাতির পাপা’ বলে মুখের লালা বের করে ফেলতো।

যাই হোক।
আলহামদুলিল্লাহ।
শেখ মুজিব স্বপরিবারে নিহত হয়ে বাংলাদেশটাকে বাঁচিয়েছে।

শেখ মুজিবের জন্য আরোও বেশী ‘গ্রহনযোগ্য মৃত্যু’ হতো যদি- তিনি ১৯৭১ সালেই পাকিস্তানীদের হাতে নিহত হতেন।
কিন্তু ‘বেশী চালাক’ শেখ মুজিব- সেদিকে যান নি।

১৯৭১ সালে শেখ মুজিব মারা গেলে ‘আমি সহ’ বাংলাদেশের প্রতিটি মানুষই তাকে ‘মহাপুরুষ’ ভাবতাম এবং তাকে ‘অনেক অনেক অনেক’ শ্রদ্ধার আসনে রাখতাম।

কারণ এতে তার ‘প্রকৃত একনায়কচিত ও স্বৈরতান্ত্রিক চরিত্র’টা বুঝতেই পারতাম না, জানার সুযোগই থাকতো না।

শেখ মুজিবর রহমান ১৯৭১ সালে মারা না গিয়ে ‘অন্তত একজন’ মানুষের জন্য হলেও ‘খুব বেশী ভাল কাজ’ করে দিয়ে গেছেন।
এবং সেই মানুষটা হলেন বেগম খালেদা জিয়া।

জিয়াউর রহমান সাহেব সিদ্ধান্ত নিয়েই ফেলেছিলেন বেগম খালেদা জিয়ার সংগে আর সংসার করবেন না। বেগম খালেদা জিয়া শেখ মুজিবের কাছে গেলেন এবং বিষয়টির সমাধানে তার হস্তক্ষেপ কামনা করলেন।

এবং নেতা শেখ মুজিব- জিয়াউর রহমানকে ডেকে নিয়ে ‘ঐ’ বিষয়টির সমাধান করে দিয়েছিলেন।

শেখ মুজিবর রহমান না বললে হয়তো দৃঢ় ব্যক্তিত্বের অধিকারী জিয়াউর রহমান- খালেদা জিয়াকে গ্রহন নাও করতে পারতেন।

এসব ইতিহাস সকলেই জানা।
কিন্তু ভুলে গিয়েছিলেন শুধুমাত্র বেগম খালেদা জিয়া।

বাংলাদেশের মানুষ এখন এদেশের অনেকেরই ব্যক্তিগত চরিত্র সম্পর্কে খোঁজ খবর রাখে। কে শেখ মৃণাল কান্তি, কে মোসাদ্দেক আলী ফালু- এসব কোনও গোপনীয় সংবাদ না।

সকলে হুমায়ূন আহমেদ এর মতো সাহস রাখে না- সবাই হুমায়ুন আহমেদ হতেও পারে না। এবং হুমায়ুন আহমেদ’রা রাজনীতিও করেন না।

সারা দেশের মানুষ ১৫ই আগষ্ট আনন্দ করলেও বেগম খালেদা জিয়ার তাতে শরিক হওয়াটা সুন্দর হয় না, প্রচন্ড দৃস্টিকটু দেখায়।

ব্যক্তিগত যোগ্যতায় নয়; শুধুমাত্র প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের স্ত্রী হবার কারণে তিনি দু’দুবার বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী হতে পেরেছেন।

তিনি যদি জিয়াউর রহমানের স্ত্রী-ই না থাকতেন- তাহলে কি প্রধানমন্ত্রী’র অফিস পর্যন্ত যাবার যোগ্যতা অর্জন করতেন?

সেই বেগম খালেদা জিয়া, আমি খুঁজে পাই না- ঠিক ‘কোন বুদ্ধিতে’ শেখ মুজিবের মৃত্যু দিবসে নিজের ‘জন্মদিন’ পালন করেছেন এতোকাল!

আমি সত্যিই ভীষণ অবাক হতাম বিষয়টা ভেবে!
কিভাবে সম্ভব?

রাজনীতি করলে কি সবগুণ-ই বিসর্জন দিতে হয়?

ওরকম রাজনীতি না-ই বা করলাম।
কি দরকার?

আমি নিশ্চিত জানি না ১৫ই আগষ্ট-ই বেগম খালেদা জিয়ার প্রকৃত জন্মদিন কি না।
হতেও পারে আবার নাও পারে।
আমি ধরেই নিয়েছি- ওটাই ওনার প্রকৃত জন্মদিন।

কিন্তু তাতে কি?
একজন মানুষ নিজেকে কিভাবে ‘বড়’ হিসাবে দেখাবেন- সেটুকুও যদি না জানেন- তার মানে তো তার কোন বিশালতাই নেই!

আর ‘বিশালতাহীন’ খালেদা জিয়া বা শেখ হাসিনাদের রাজত্বে বাংলাদেশ আজ পৃথিবীর সবচে নোংড়া, পঁচা, দুর্গন্ধময় একটা দেশ!
যেখানে পরবর্তী নেতৃত্ব দিতে অপেক্ষায় রয়েছে আরও দু’জন পুরুষ(!) সজীব ওয়াজেদ জয় ও তারেক রহমান।

আর বাংলাদেশের বাকী সবাই নপুংসক!


Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *