প্রসংগ বাংলাদেশে পে-পল
আমি সেই ২০০৪ সাল থেকেই ঢাকা থাকতেই পেপল ব্যবহার করে আসছি। আমার একাউন্টটি ‘চায়না ইন্টারন্যাশনাল’ ভেরিফাইড। আমার যেহেতু ইন্টান্যাশনাল বিজনেস ছিল সেহেতু ইকমার্স এবং পেপল নিয়েই আমার কারবার ছিল। চায়না ইন্টারন্যাশনাল পেপলের বৈশিষ্ট ছিল আনলিমিটেড ট্রান্সজ্যাকশন সুবিধা এবং ফান্ড হেল্ড হতো না।
আমি আমার ‘ব্যাংক অব চায়না’র একাউন্টটি ব্যবহার করতাম এবং ইউনিপের ডেবিট কার্ড ব্যবহার করতাম। পরবর্তীতৈ অবশ্য এবিসি কার্ডও ব্যবহার করতাম। ‘এবিসি’ হলো এগ্রিকালচার ব্যাংক অব চায়না।
বাংলাদেশের অনেকেই ‘বাংলাদেশে পে-পল’ নিয়ে অনেক কথা বলে। আসবে, চলে আসবে এসব বলে থাকে।
আমার ভারতীয় পে-পল একাউন্টও রয়েছে এবং সেটাও ভেরিফাইড, কোলকাতায় এক্সিস ব্যাংকে আমার একাউন্ট রয়েছে। কিন্তু ভারতের পে-পল ব্যবহার করা অত্যন্ত কঠিন। প্যান কার্ড হলো সেখানকার টিআইএন নাম্বার। সকল তথ্য অনলাইনে থাকে এবং ছোট বড় সব ট্রানজ্যাকশনই ভারত সরকার খবরদারী করে। যে-কারনে চাইলেই ভারতীয় পে-পল সহজ ভাবে ব্যবহার করা অসম্ভব হয়ে পড়ে।
কিন্তু ভারতীয় প্যান কার্ড এবং ব্যাংক একাউন্ট চিন্তা থেকে বাদ দেয়েটাই যুক্তিযুক্ত এবং অত্যন্ত বুদ্ধিমানের কাজ হবে।
বাংলাদেশ সরকারের আইন হলো- ‘বছরে একজন মানুষ সর্বোচ্চ ৭,০০০ ডলার বিদেশে সংগে করে’ নিয়ে যেতে পারবে- অন্য কোন উপায়ে নয়। কিন্তু আমি বছরে প্রায় ৫০ বার এর অধিক বিদেশ ভ্রমণ করতাম। এবং প্রতিবারই ৭০০০ ডলারের উপরে … হা হা হা। মজার বিষয়টা হলো আমার পাসপোর্টে কোনদিনও কোন ডলার এনডোর্স করতাম না। ইমিগ্রেশন আর কাষ্টমস এর অফিসারগুলি আমার পাসপোর্ট এর পুরুত্ব দেখেই আমার সাথে কোন ঝামেলা করতো না। আমাকে তাড়াতাড়ি ছেড়ে দিত- মাঝে মধ্যে ‘বিদেশী পাসপোর্ট’ লাইন দিয়ে তাড়াতাড়ি বিদেয় করে দিত সম্মানের সাথে। অবশ্য, এজন্য আমার ‘ভারী গেটআপ’ও কিছুটা দায়ী!
এবার পে-পলের কথা বলি।
পে-পল হলো মূলত আমেরিকা ভিত্তিক ইন্টারনশানাল অনলাইন ব্যাংক। পে-পলের বৈশিষ্ট হলো অনলাইনে ক্রস-বাউন্ডারী ব্যাংকিং। যে-কাউকে টাকা পাঠানো এবং টাকা রিসিভ করার জন্যই পে-পল। কিন্তু পে-পলের পক্ষে তো সম্ভব নয়- অন্য দেশের আইন অমান্য করে কিছু করা। আমেরিকা আইন মানা জাতি। আইনের বাইরে এরা কিছুই বুঝে না।
পে-পল যদি বাংলাদেশে অপারেশন চালু করে- তাহলে বাংলাদেশীরা টাকা রিসিভ করতে পারবে- ‘বিদেশ পাঠাতে পারবে না’; যেটা পে-পলের অপারেশন এর সাথে সাংঘর্ষিক।
বাংলাদেশ সরকারের গাধাগুলি মনে করে বিদেশে টাকা পাঠানোর অনুমতি দিলে সব টাকা বিদেশে চলে যাবে। এই দেশে আছেই কি- আর যাবেই কি? তাছাড়া বিদেশে টাকা পাঠানো কি সরকার বন্ধ করতে পারবে? কে কত টাকা বাংলাদেশ থেকে বিদেশে পাঠাবেন আমাকে বলেন; ৪৮ ঘন্টার পাঠিয়ে দিচ্ছি। নইলে তো বাংলাদেশে কোন ব্যবসায়ী-ই থাকতো না যদি না হুন্ডির ব্যবস্থা না থাকতো। বাংলাদেশে কোন ইন্টারন্যাশনাল ব্যবসায়ী রয়েছে যে হুন্ডি করে না?
‘আমি শুধু টাকা নিবো- কাউকে দেবো না’ এটা অসভ্যতা- আর বাংলাদেশতো অসভ্যই।
যতদিন না বাংলাদেশের টাকা বিদেশে পাঠানোর আইন চালু না হচ্ছে ততদিন পর্যন্ত পে-পল কিভাবে বাংলাদেশে অপারেশনে যাবে?
কাজেই বলটা এখনও অবধি বাংলাদেশের কোর্টেই লাফালাফি করছে; যেখানে পে-পলের কিছুই করার নেই।
তথাকথিত ডিজিটাল বাংলাদেশ অাদৌ কি কোনদিন ডিজিটাল হবে? বাংলাদেশের প্রায় ১০ মিলিয়ন প্রতিভাবান ছেলেরা রিমোটে বসে অফশোর কাজ করে অনলাইনে টাকা আয় করছে- কিন্তু টাকা আনতে বা পাঠাতে পারছে না। ‘পেঅনইয়ার’ তার চড়া মূল্যের ক্রেডিট কার্ড দিয়ে কিছুটা সহায়তা দিয়ে যাচ্ছে।
বাংলাদেশ সরকার কোনদিন দেশের সাধারণ মানুষকে নিয়ে ভাবে নাই। ভাবার সম্ভাবনাও দেখছি না। সুতরাং পে-পলও আসছে না।
তবে, সহজ বুদ্ধিটা হলো একটু কষ্ট করে চায়না চলে যান অন্তত একবার। এবিসি বা ব্যাংক অব চায়না বা অন্য যে-কোন চাইনিজ ব্যাংকে একটা একাউন্ট করে ফেলুন। চায়নাতে ব্যাংক একাউন্ট করতে কিছুই লাগে না। শুধু আপনার পাসপোর্ট এবং যে-হোটেলে থাকছেন সেই হোটেলের একটা ভিজিটিং কার্ড নিয়ে ব্যাংকে যেয়ে একাউন্ট করে ফেলুন। চাইনিজ ব্যাংকিং পেপারলেস। ইন্সট্যান্ট ডেবিট কার্ড এবং অনলাইন ব্যাংকিং আইডি পেয়ে যাবেন। জিরো ব্যালেন্সেও কোন চার্জ নেই। চায়না মানুষদের দেশ; বাংলাদেশের মতো না।
এরপর পে-পলে চায়না ইন্টারন্যাশনাল এর একটা একাউন্ট খুলে ফেলুন। ব্যাংক একাউন্টটি এড করে দিন, ডেবিট কার্ড এড করে দিন। চায়নার সেই হোটেলের এড্রেসটি দিয়ে দিন। ফটো আইডি ভেরিফিকেশনের সময় পাসপোর্টে নিজেকে বাংলাদেশী পরিচয় দিন। কোন তথ্য গোপন করবেন না পে-পলের কাছে; পে-পল কিন্তু ভয়ংকর চিজ! আর ম্যানুয়ালী আপনার পাসপোর্টটি পে-পলে ইমেইল করে দিন। ব্যাস হয়ে গেল। বাংলাদেশ সরকার জানলোওনা আপনি কি করলেন।
এবার মন দিয়ে ব্যবসা বা কাজের দিকে মনোনিবেশ করুন।
এবং সামনে এগিয়ে যান।