প্রসংগ বাংলাদেশের জাতির পিতা


১৯৪৭ সালে পাকিস্তান রাষ্ট্রের গোড়াপত্তনের কারণেই ১৯৭১ সালে বাংলাদেশ রাষ্ট্রটি প্রতিষ্ঠিত হতে পেরেছিল।
 
বৃটিশ নিয়ন্ত্রিত ভারতবর্ষ ভেংগে দু’টি আলাদা রাষ্ট্র ভারত ও পাকিস্তান প্রতিষ্ঠা সম্ভব না হলে এবং সেদিন বাংলাদেশ ভুখন্ডটি পাকিস্তানাধীন না হলে আদৌ কোনদিন স্বাধীন ও স্বার্বভৌম দেশ হিসাবে বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠিত হতে পারতো না; ভারত-বর্ষের কজ্বায় ধুকে ধুকে আরেক কাশ্মিরে পরিণত হতো এই পূর্ব বাংলা ভুখন্ডটি।
 
আর সে সময় যদি মোহাম্মদ আলী জিন্নাহর মতো ব্যক্তিত্বের উপস্থিতিই ‘পাকিস্তান’ সৃষ্টিতে সহায়ক ছিল- তার চমৎকার নেতৃত্ব ও গভীর দেশপ্রেম সকলকে উজ্জীবিত করেছে। তিনি যদিও ‘উর্দূ’কেই পাকিস্তানের একমাত্র রাষ্ট্র ভাষা করার ঘোষনা দিয়েছিলেন কিন্তু তার ঢাকা সফরের পর তিনি তার সেই ঘোষনা থেকে সরে আসেন।
 
পাকিস্তান আন্দোলনের অন্যতম বলিষ্ঠ নেতা শেখ মুজিবর রহমানের রাজণৈতিক গুরু হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী পশ্চিম বাংলার মেদেনীপুরের মানুষ। পাকিস্তান গঠিত হবার পর তিনি পূর্ব বাংলায় স্থায়ীভাবে বসবাস না করলেও পশ্চিম পাকিস্তানের করাচীতে গিয়ে পাকিস্তানের জাতীয় রাজনীতিতে নেতৃত্ব দিয়েছেন। তাঁর কবরটি ঢাকায় অবস্থিত।
 
ঢাকার নবাববাড়ীর খাজা নাজিমুদ্দিনও পাকিস্তান আন্দোলনের বলিষ্ঠ কন্ঠস্বর। এবং তিনি পূর্ব বাংলার প্রথম প্রধানমন্ত্রী এবং পরবর্তীতে পাকিস্তানের গর্ভনর জেনারেল ও প্রধানমন্ত্রীত্বও করেছেন; যদিও মহান ভাষা আন্দোলনে এবং পশ্চিম পাকিস্তানমুখীতায় তার সমালোচনাও হয়।। শেরে বাংলা একে ফজলুল হক পূর্ব বাংলার (পূর্ব পাকিস্তানের) প্রধানমন্ত্রী (মূখ্যমন্ত্রী) এবং গর্ভণর ছিলেন। বাংলার নেতৃত্ব তার অবদান অপরিসীম।
 
মাওলানা ভাষানী’র রাজনৈতিক অবদানও পাকিস্তান এবং বাংলাদেশ সৃষ্টিতে অনিবার্য ছিল। শেখ মুজিবর রহমান পূর্ব পাকিস্তানের মানুষকে সুসংগঠিত করেছেন এবং বাংলাদেশ সৃষ্টিতে তাঁর অবদানই সবচে বেশী বলে মনে করা হয়। সেই সংগে বিদ্রোহী ইষ্ট বেঙল রেজিমেন্ট ও বিশেষ করে স্বাধীনতার ঘোষক ও মুক্তিযুদ্ধে জেড ফোর্সের প্রধান এবং পরবর্তীতে প্রেসিডেন্ট জেনারেল জিয়াউর রহমান, মুক্তিযুদ্ধকালীন সরকারের প্রবাসী প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দিন আহমেদ এর অবদান আকাশসম।
 
এবং বাংলাদেশ সৃষ্টিতে সবচে বেশী এবং বাস্তবিক অবদান দেশের মুক্তিযোদ্ধাদের।
 
কারো একক অর্জনে বাংলাদেশ সৃস্টি হয়নি।
দেশকে কে পৈত্রিক সম্পদ ভাবেলেই তাকে একক অর্জন হিসাবে বিবেচনা করে থাকে।
 
বাংলাদেশ কোন একক জাতি না।
বাংলাদেশ খুব কম হলেও একটি বহুজাতিক, ধর্মের দেশ।
বাঙালী প্রধান বাংলাদেশে ‘পাহাড়ী আদিবাসী গোত্রসমূহ’ যেমন রয়েছে তেমনি রয়েছে অপাহাড়ী উপজাতি-গোষ্ঠীরাও যাদের নিজস্ব ভাষা পর্যন্ত রয়েছে।
 
আর বাঙালী জাতিও শুধু বাংলাদেশে নয়- পশ্চিম বংগ, আসাম, ত্রিপুরা, আন্দামান ও নিকোবর আইল্যান্ডসএও বাঙালীরা বসবাস করে। শেখ মুজিব তাদের প্রতিনিধিত্ব করেন নি।
 
সুতরাং জাতির পিতা হিসাবে কাউকে মনোনয়ন দেয়াটা বোকামী-পূর্ণ, অযৌক্তিক ও দৃষ্টকটু।
 
তবে, অবশ্যই স্বাধীন স্বার্বভৈৗম বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা-পিতা থাকতে হবে এবং থাকাটা যুক্তিযুক্তও বটে।
 
সেই হিসাবে বাংলাদেশের ‘ফাউন্ডিং ফাদারর্স’ বা ‘প্রতিষ্ঠাতা-পিতাগণ’ হিসাবে যাদের নাম অবশ্যই বিবেচনা করতে হবে- তারা হলেন:
শেখ মুজিবর রহমান
হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী
শেরে বাংলা একে ফজলুল হক
খাজা নাজিমুদ্দিন
মাওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাষানী
লেফটেনেন্ট জেনারেল জিয়াউর রহমান
তাজউদ্দিন আহমেদ
 
আমি তাদের সকলকে শ্রদ্ধার সংগে স্মরণ করছি।
এবং আশা প্রকাশ করছি ‘বাংলাদেশ’- একদিন না একদিন অবশ্যই তাদের ‘ফাউন্ডিং ফাদারর্স’ এর মর্যাদা দিবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *