প্রচন্ড গরমে একটা শীতের গল্প


প্রচন্ড গরমের এই সিজনে একটা শীতের গল্প বলি
 
২০০২ এর ঘটনা। হঠাৎ খুব ইচ্ছে হল স্নো দেখবো। মানে আকাশ থেকে বরফ পরা দেখব। আর আগেই তো বলেছি- সিদ্ধান্ত যেটা নিই সেটা আমি করবই।
 
কলকাতা থেকে বাসে করে শিলিগুড়ি, ওখান থেকে ফোরহুইল ড্রাইভ জীপ এ চড়ে গ্যাংটক।
 
হ্যাঁ, মানে সিকিম।
সিকিম রাজ্য।
 
এ রাজ্যটি ১৯৭৫ সালে ভারতের সাথে একীভূত হয়; তার আগে তারা স্বাধীন দেশ হিসাবেই ছিল।
 
রমজান মাস। প্রচন্ড শীত। সন্ধ্যার দিকে আমি আমার বন্ধু মাহাবুব (এই শয়তানটা আমার অনেকগুলো ভ্রমনেরই সংগী; এখন প্যারিসের কাছে কি একটা ভৌতিক শহরে যেন বসবাস করছে; ও আবার আওয়ামী লীগ; মানে- মানুষ না)। একটা হোটেল গিয়ে উঠলাম। ইফতার কাম ডিনার সারলাম। ঘুমিয়ে পরলাম ও ঘুম থেকে খুব সকালে উঠলাম- জীপে করে বরফ পড়া দেখতে যাব।
 
গ্যাংটক শহরটি খুবই মজার, খুবই সুন্দর। দার্জিলিং এর চেয়েও সুন্দর। গোছালো ছিমছাম পরিপাটি। বাংলা ভাষার খুব একটা প্রচলন নেই ওখানে। জীপ ছাড়লো নাথুলা’র উদ্দেশ্যে ‘ফুল ডে ট্রূর’। নাথুলা চায়নার সাথে ইন্ডিয়ান বর্ডার।
 
প্রথমে পৌছলাম ছংগু লেক (Tsongmo Lake); ঐদিনই বরফ পরা শুরু হয়েছে। এই লেকের পানি শীতে জমে বরফ হয়ে যায়- তখন ঐ বরফের উপর দিয়ে হাঁটাচলাও করা যায়। খুব মজা লাগছে।
 
বাট আমার কিন্তু রোজা লেগে গেছে। ভয়াবহ শীত। ওখানে গরম জ্যাকেট ভাড়া পাওয়া যায়। ৩০ রুপি দিয়ে জ্যাকেট নিলাম কান-টুপিসহ; গাঁয়ে চড়ালাম। শীত কমল। মাহুবুব লোকাল গরম গরম ‘সূপ-নুডলস’ খেয়ে নিল। আমি রোজা; খেলাম না। জীপ আবার চলতে শুরু করল। একটু পর দেখলাম আমদের গাড়ী শুধু উপররেই উঠছে। উঠতে উঠতে মেঘসীমাও পার হয়ে গেলাম। বিমানে যাবার সময় মেঘ ভেদ করে উপরে উঠতে এক ধরনের মজা কিন্তু গাড়ীতে করে মেঘসীমা পার হওয়া!
 
– দারুনস্ অনুভূতি।
 
আরও উপরে- আরও। তবে আমি প্রচন্ড কষ্টে রয়েছি। নিজেকে সামলানো খুবই কষ্ট হচ্ছে। মাহাবুব বার বার বলছে রোজা ভেংগে ফেলতে; কিন্তু আমি ভাঙ্গবনা।
 
একটু পরই দেখলাম সামনে সব কিছু সাদা, ধবধবে সাদা। অদ্ভুৎ সুন্দর। মাটি সাদা, গাছ সাদা, কালো রাস্তাও অনেকস্থানেই সাদা। এই তো বরফ।
 
কিন্তু শরীর মানছে না। প্রচুর শীত। সকলে একটু পর পর গরম পানি, চা, কফি খাচ্ছে। আমি একমাত্র যে না খেয়ে আছি, শীতে কাঁপছি। ঐ শীতের কথা বলে বোঝানো যাবে না। খোলা জীপ, বাইরে বরফ পরছে। হীম শীতল বাতাস গাড়ীর ভেতরে ঢুকছে।
 
বরফে খেলা করতে আমাদের এবার যাত্রা বিরতী। এর পররে গন্তব্য-ই নাথুলা পয়েন্ট।
আমি গাড়ী থেকে নামতে যাচ্ছি- বরফ নিয়ে খেলা করবো। কিন্তু একি আমার পা তো এগুচ্ছে না। একটু জোর করে দাড়াতে চেস্টা করলাম। শুধু মনে হলো পারছি না, শক্তি নেই শরীরে। তারপরও আর মনে নেই কিছু। জ্ঞান হারালাম। সম্ভবত মিনিট পাঁচেক পর জ্ঞান ফিরল। বন্ধু মাহাবুব আমার পাশে বসা- আমাকে ধরে রেখেছে। হাতে গরম পানির ফ্লাক্স। জোর করল- গরম পানি খেতে। জীবনের প্রথম রোজা ভাংলাম। জীবন বাঁচানোও তো ফরজ!
 
– শরীর গরম পানি পেয়ে আবার চাংগা হল। নামলাম, বরফ দিয়ে খেললাম। ছবি পাগলা আমি প্রচুর ছবি তুললাম। তারপর নাথুলা, তারপর ফেরা- মানে গ্যাংটক।
 
নোট: সিকিম ভ্রমন করতে শিলিগুরিস্থ সিকিমের সরকারী অফিস থেকে বিশেষ অনুমতি পত্র নিতে হয়। কিন্তু বাংলাদেশী ও পাকিস্তানীদের এখান থেকে অনুমতির আবেদন গ্রহন করা হয় না; তাদের আবেদন করতে হয় নয়াদিল্লী থেকে। এবং নয়াদিল্লী থেকে বাংলাদেশী ও পাকিস্তানীদের কোনদিন সিকিম ভ্রমণের অনুমতি দেয়া হয় না। অর্থাৎ বাংলাদেশীদের সিকিম ভ্রমণ হারাম।
 
বি.দ্র. আমি বাংলাদেশী এবং, এবং সিকিম ভ্রমণ করেছি।
 
 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *