চলতি পথের কথা


 
ছোট বেলায় যখন লঞ্চ করে যাতায়াত করতাম- বিশেষ করে ঢাকার সদরঘাট থেকে কলাকোপা বান্দুরায়; তখন প্রায়ই দেখতাম- বিশেষ করে মরিচা বা কৈলাইল এলাকায়; কয়েকজন ছেলে বা বয়ষ্ক অন্ধ লোক ইন্সট্রমেন্ট ছাড়া কিংম্বা অতি সাধারণ জিনিসকে তবলা’র মতো করে বানিয়ে নিয়ে ওটাতেই সুর তুলে খালি গলায় গান করছে।
 
গানগুলি যে খুব ভালো হতো- সেটা বলছি না; কিন্তু ওটা ছিল তাদের উপার্যনের একটা উপকরণ মাত্র। গান শুনে অনেকেই খুশী হয়ে তাদের কিছু টিপস্ দিত- ওতেই ওরা খুশী।
 
কিছু চলন্ত বাসও অনেকটা ওরকম দেখা মিলে।
আমার ধারণা ছিল ওটা বুঝি আমাদেরই গ্রাম বাংলার একটা বৈশিষ্ঠ্য।
 
চলতি পথে এছাড়াও প্রায়ই দেখা মিলতো- ‘ঝাল মুড়ি’, আমড়া, শশা, বাদাম ইত্যাদি।
 
হাওড়া থেকে দিল্লী বা মুম্বাই রেল রোডেও বিশেষ করে যখন নন এসিতে যাতায়াত করেছি (২০০০ সালের দিকে) তখনও মাঝে মধ্যে এই একই দৃশ্য দেখেছি।
 
তবে, বনগাঁ থেকে শিয়ালদহ লোকাল ট্রেনে বা আগরতলা থেকে পানিসাগর রুটেও অনেক সময়ই এটা দেখা যেত- এখন আছে কি না জানি না ঠিক।
 
দার্জিলিং এর মিরিক বর্ডার দিয়ে ঢুকে নেপালের পশুপতিনাথ থেকে বাসে ১৭ ঘন্টার জার্নিতে একবার গেলাম কাঠমান্ডু। চমৎকার ছিল আমার সেই প্রথম নেপাল ভ্রমণটি।
 
সেই বাসটি ছিল লোকাল।
প্রতিটি ষ্টপেজ এ গাড়ী থামতো- আর জানালার পাশে ছোট ছোট নেপালী ছেলেরা বিভিন্ন খাবার নিয়ে ভিড় করতো। কলা, শশা নিয়ে চিৎকার করতো ‘ক্যালা ক্যালা, মাকাই মাকাই’। এখনও আমার কানে ভাসছে সেই কথাগুলি।
 
চায়না, হংকং, মালয়েশিয়া বা সিংগাপুরে আমার চোখে এসব কখনও পরেনি। বেইজিং শহরটাকে আমার কাছে একটা বিশাল গ্রামের মতোই মনে হয়। বেইজিং থেকে বাওডিং পর্যন্ত আমি একবার লোকাল বাসে করে গিয়েছিলাম একটা কাজে- সেখানেও এসব আমার চোখে পরেনি। হয়তো বা রয়েছেও- কে জানে?
 
কিন্তু নিউ ইয়র্কে এই বিষয়গুলি খুব চোখে পরে।
 
ভিক্ষুকের (হোমলেস) পাশাপাশি কিছু স্প্যানিশকে প্রায়ই দেখি ইন্সট্রমেন্ট নিয়ে স্ট্যানিশ ভাষায় গান করে ‘টিপস’ তুলছে। ‘ফ্রেস ভিক্ষা’ করার চেয়ে এটা ভালো। কিছু ব্লাক টিনেজদের দেখা যায় চলন্ত ট্রেনে সার্কাস দেখিয়ে টিপস নিচ্ছে।
 
কিন্তু এসব ছাড়িয়ে ম্যানহাটনের কিছু সাবওয়ে ট্রেনে একটা অদ্ভুৎ বিষয় আমার খুবই দৃষ্টি কাড়ে।
 
ওহ, আরেকটা কথা বলেনি। আমেরিকাতে সফট-ড্রিংক (পেপসি, সেভেনআপ, জিনজার ইত্যাদি) কে বলা হয় ‘সোডা’।
 
আমেরিকাতে খোলা কোন খাবার বিক্রি হয় না। সবই প্যাকেটজাত। শুধুমাত্র টাটকা ফলগুলি সুন্দর করে কেটে প্লাষ্টিক বক্সে করে পাওয়া যায় গ্রোসারীতে।
 
বয়ষ্ক ৪জন লোক।
তাদের ট্রলিতে কিছু প্যাকেটজাত খাবার ও পানি বা সোডা নিয়ে কামড়ায় ঢুকে। তারা খুব চমৎকার ভাবে কিছু কথা বলে। কথাগুলির বাংলা করলে দাঁড়ায়:
‘তোমরা যারা ক্ষুধার্ত তারা আমার কাছ থেকে কিছু নিয়ে খাও। তোমার কাছে টাকা থাকলে- যা মন চায় আমাকে দাও। কোন কিছু না খেয়েও টাকা দিতে পারো। আর যদি টাকা না থাকে- তবুও তুমি যদি ক্ষুধার্ত থাক- নিসংকোচে নিয়ে খাও; কোন টাকা দিতে হবে না। আমরা চাই সবাই খেতে পারুক- যার টাকা আছে সেও যেমন; যার টাকা নেই- সেও তেমনি করেই খাক। তুমি যে বাড়তি টাকা আমাকে দিচ্ছ- সেই টাকায় অনেক ক্ষুধার্ত-ই খাবার পাবে।’
 
অসাধারণ!
আমি মুগ্ধ হয়ে যাই প্রায়ই!!
আমেরিকা আমাকে প্রায়ই মুগ্ধ করে!!!

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *