কিছু মানুষের কিছু কথা


চলুন আজ দুজন আপন ভাইয়ের গল্প শুনি। বড় ভাইটির নাম ছিল জাকির হুসাইন, তার জন্ম ১৮৯৭ সালে হায়দ্রাবাদে; তার ছোট বেলাতেই তার বাবা ফিদা হুসেইন খান হায়দ্রাবাদ থেকে কাইয়ামগঞ্জে (উত্তর প্রদেশ) মুভ করেন এবং ছোট ভাইটির জন্ম ১৯০৭ সালে কাইয়ামগঞ্জেই- নাম তার মাহমুদ হুসাইন।

ছোট ভাই মাহমুদ হুসাইন ‘পাকিস্তান আন্দোলন’ এর একজন অত্যন্ত প্রভাবশালী নেতা ছিলেন। বৃটিশদের বিদায়ের পর ভারত-পাকিস্তান সৃষ্টি হলে ছোট ভাই মাহমুদ হুসাইন পাকিস্তানে চলে আসেন।

প্রফেসর মাহমুদ হুসেইন ১৯৬০ থেকে ১৯৬৩ সাল পর্যন্ত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন। এছাড়া তিন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী খাজা নাজিমদ্দিন এর শিক্ষা মন্ত্রী হিসাবেও অল্প সময় (১৯৫৩ সালে) দায়িত্ব সামলান। পরে তিনি করাচী বিশ্ববিদ্যালয়েরও ভিসির দায়িত্ব পালন করেছিলেন।

মাহুমদ হুসেইন ১৯৭১ সালে ‘বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের’ একজন একনিষ্ট সমর্থক হিসাবে সমালোচিত হন। ১৯৭৫ সালে তিনি করাচীতে মারা যান।
বড়ভাই জাকির হোসেন ছিলেন ভারতের তৃতীয় প্রেসিডেন্ট (১৯৬৭-১৬৬৯) এবং ১৯৬২ থেকে ১৯৬৭ সাল পর্যন্ত তিনি ভারতের দ্বিতীয় ভাইস-প্রেসিডেন্ট হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি ভারত-রত্ন ও পদ্মভূষন পদক পেয়েছিলেন। ১৯৬৯ সালে তিনি নয়াদিল্লীতে মারা যান।

এবার চলুন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আরও একজন ভিসির গল্প শুনি।১৯১০ সালে পাটনায় জন্ম নেয়া বাঙালী হামদুর রহমান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসির দায়িত্ব পালন করেন ১৯৫৮ থেকে ১৯৬০ সাল পর্যন্ত। পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার পর ১৯৪৮ সালে তিনি ঢাকায় স্থায়ী আবাস গড়েন।

১৯৬০ সালে তিনি পাকিস্তান সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি নিযুক্ত হন এবং ১৯৬৮ সাল থেকে ১৯৭৫ সাল পর্যন্ত টানা ৭ বছর তিনি পাকিস্তানের প্রধান বিচারপতির দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় তিনি পাকিস্তানের প্রধান বিচারপতি ছিলেন এবং বাংলাদেশের বিরোধীতা করে পাকিস্তানের পক্ষালম্বন করেন।

জুলফিকার আলী ভুট্টো প্রেসিডেন্ট হবার পর পাকিস্তান থেকে বাংলাদেশ বিচ্ছিন্নতার কারণ নিয়ে গঠিত ‘ওয়ার ইনকোয়ারী কমিশন’ এর প্রধান নিযুক্ত হন যা ‘হামদুর রহমান কমিশন’ নামেই বেশী পরিচিতি পায়; বিচারপতি হামদুর রহমান যে বহুল আলোচিত রিপোর্টটি তৈরী করে জুলফিকার আলী ভুট্টোকে দিয়েছিলেন সেই রিপোর্ট কোনদিনও আলো-বাতাসের মুখ দেখেনি।

বিচারপতি হামদুর রহমান ১৯৮১ সালে ইসলামাবাদে মারা যান।
এবার আরও একজন পাকিস্তানীর (নাকি বাংলাদেশী!) কথা বলবো।১৯৩৩ সালে রাঙামাটিতে জন্মগ্রহন করেছিলেন ত্রিবিদ রয়। ১৯৫৩ সালে তিনি চাকমা সার্কেলের রাজা হিসাবে দায়িত্ব গ্রহন করেন। ১৯৭০ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের বাইরে থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে তিনি পাকিস্তানের পক্ষাবলম্বন করেন এবং রাঙামাটিতে যুদ্ধাপরাধের সংগে জড়িয়ে পরেন। পাকিস্তান পরাজিত হবার আগেই তিনি ইসলামাবাদে চলে যান।

পাকিস্তান সরকার ত্রিবিদ রয়কে যথাযথ সম্মান প্রদান ও পুরুস্কারও দিয়েছিলেন। জুলফিকার আলী ভু্ট্টো পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রীত্ব গ্রহন করে ত্রিবিদ রয়কে পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট হবার জন্য অনুরোধ করেছিলেন কিন্তু ত্রিবিদ রয় সেই অনুরোধ ফিরিয়ে দেন কারণ পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট পদটি শুধুমাত্র মুসলিমদের জন্য সংরক্ষিত। তারপর তাকে বিভিন্ন দেশে ‘মন্ত্রীর মর্যাদায়’ রাষ্ট্রদুত হিসাবে নিয়োগ দেয়া হয় এবং মন্ত্রী মর্যাদা অব্যহত রেখেই তিনি ২০১২ সালে ইসলামাবাদে মারা যান।

রাজাকার ত্রিবিদ রয়ের পুত্র ব্যারিস্টার দেবাশিষ রয় ১৯৭১ সালেই রাঙামাটির চাকমা সার্কেলের রাজার দায়িত্ব নেন এবং এখনও তিনি রাজা হিসাবেই দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছে। বিগত তত্ববধায়ক সরকারের সময় তিনি বাংলাদেশ সরকারের উপদেষ্টার দায়িত্বও পালন করেন।


Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *