মেয়েটার নাম ঝিল্লী।
২০ বছর বয়সে ইমিগ্রান্ট হয়ে আমেরিকায় এসেছে, সংগে বাবা-মা ও একভাই। দেশে থাকতে তার বাবার নগদ টাকা যা ছিল চার জনের এয়ারটিকেট কিনেই শেষ।
সৌভাগ্য আমেরিকায় তার এক বোন সিটিজেন, তার আবেদনেই তারা ইমিগ্রান্ট হয়েছে।
মেয়েটা প্রচন্ড বুদ্ধিমতি, সৎ, সাহসী এবং আত্মসম্মানবোধ সম্পন্ন। বাংলাদেশ থেকে এইচএসসি পাশ করে একটা জেলা কলেজে ইংরেজী সাহিত্যে অনার্সে ভর্তি হয়েছিল।
বয়স্ক বাবা-মা কোন কাজ জোগার করতে পারছে না।
মেয়েটির চিন্তা- ছোট হলেও নিজস্ব বাসা ভাড়া নিয়ে সকলে একসংগে থাকবে।
অতপর একটা রেষ্টুরেন্টে তার ওয়েটারের চাকুরী জুটে যায় আমেরিকা আসার ৬ দিনের দিন। প্রতিদিন ১২ ঘন্টা করে কাজ করতে হবে, সপ্তাহে মোট ৫ দিন। মালিক বেতন দেবে মোটে ৪৫০ ডলার নগদে এবং ট্যাক্স কাটবে না। ঝিল্লী’র কাজটি ভীশন দরকার, সে অন্য কোন দিকে খোঁজ না করেই কাজটিতে জয়েন করে।
দু’সপ্তাহ পরে সে মালিকের কাছ থেকে কিছু টাকা এডভান্স নিয়ে একটা ষ্টুডিও রুম ভাড়া নিয়ে ৪ জন মিলে সেই একটি মাত্র রুমের বাসায় উঠে। একটা মাত্র রুম, সেটাতেই সকলকে শেয়ার করে থাকতে হয়। ঝিল্লী একা ইনকাম করে।
যাই হোক, মেয়েটি খুবই সাহসী এবং সে জানে আমেরিকার মাটিতে সে অত্যন্ত নিরাপদ।
ঝিল্লী দিনে দিনে আরও বেশী সাহসী হয়ে উঠে।
মাস তিনেকের মাথায় সে আমেরিকান আর্মীতে লোক নিয়োগ দেখতে পেয়ে সেখানে যোগাযোগ করে এবং একজন সার্জেন্টের সংগে তার কথা হয়।
ওখানে মেয়েটাকে প্রয়োজনীয় পরীক্ষা করা হয়।
মেয়েটি মাত্র ৫’১” লম্বা।
এবং ওভারওয়েট। ১৭৪ পাউন্ড।
আমেরিকার সেনাবাহিনীতে লম্বা কোন সমস্যা না। কিন্তু তার ওয়েট লম্বার অনুপাতে অত্যন্ত বেশী।
একজন সার্জেন্টকে দায়িত্ব দেয়া হল ঝিল্লীর ওয়েট কমাতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য।
ঝিল্লী সপ্তাহে দু’দিন ১ ঘন্টা করে নির্ধারিত ফিল্ডে গিয়ে ব্যায়াম করে এবং তাদের করে দেয়া খাবার-রুটিন অনুসরন করে। এবং তিন মাসে তার ওয়েট প্রায় ২০ পাউন্ড কমে আসে।
ঝিল্লী যে সময়টাতে যায়- ঐ সময়ে অন্য যারা ব্যায়াম করে তাদের সংগে টাইমিং হয় না বিধায় অন্য একজন সার্জেন্ট আলাদাভাবে ঝিল্লীকে ব্যায়ামে এককভাবে সময় দেয়।
এদিকে ঝিল্লী কোত্থেকে যেন জানতে পারে সেনাবাহিনীতে প্রচুর পরিশ্রম করতে হয় এবং প্রায় দু’বছর কঠিন ট্রেনিং করতে হয়। এবং ট্রেনিং শেষে বাইরের যে-কোন যুদ্ধক্ষেত্রে পাঠানো হয় যুদ্ধ করতে। সেটা আফগানিস্তানও হতে পারে। এছাড়া আরও কিছু বিষয় তাকে কিছুটা আশাহত করে সেনাবাহিনীতে জয়েনিং এর ক্ষেত্রে।
একদিন সার্জেন্টকে ফোন করে সে ‘না’ বলে দেয়।
কিন্তু সার্জেন্ট তারপরও তাকে প্রায় প্রতি সপ্তাহেই ফোন করে জয়েন করতে অনুরোধ করে। বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা সম্পর্কে ধারণা দেয়। উচ্চ বেতন, উচ্চ শিক্ষার সুযোগ ইত্যাদি বলে বলে লোভ দেখায়।
এর মধ্যেই ঝিল্লী দেখতে পায় নিউ ইয়র্ক পুলিশ ডিপার্টমেন্টের ট্রাফিক এনফোর্সমেন্ট এজেন্ট হিসাবে লোক নিবে এবং পোষ্টিং সিটিতেই। ভাল বেতন। ঝিল্লী লিখিত পরীক্ষায় অংশগ্রহন করে এবং টিকে যায়।
সে একই সময়ে ম্যাকডোনাল্ডস এবং জেএফকে এয়ারপোর্টের ওটিজি’র আন্ডারে রেষ্টুরেন্ট জব পেয়ে যায় যেখানে বেতন ১৩ ডলার/ ঘন্টা। সে ম্যাকডোনাল্ড এ জয়েন করে।
যাই হোক, ট্রাফিক পুলিশের জবটিতে নিয়োগ সময়সাপেক্ষ, সেখানা দীর্ঘ প্রস্তুতি এবং নানা হিসাব নিকাশ। ঝিল্লী লেগে থাকে, ম্যাকডোনাল্ড এর জবের পাশাপাশি।
এরি মধ্যে পুলিশের ট্রাফিকে দ্বিতীয় ধাপের আরও একটা পরীক্ষায়ও সে উত্তীর্ণ হয়। এবার তার মূল আবেদনপত্র জমা দেবার পালা আসে।
নিউ ইয়র্ক পুলিশ নিউ ইয়র্ক সিটির অধীনে। এটা সিটি জব।
ঝিল্লীর কাছে তার বিগত জীবনের পড়াশোনা, খুঁটিনাটি থেকে শুরু করে তার ১৪ গোষ্ঠীর নাম-ঠিকানা পেশা সব কিছু জানতে চাওয়া হয়েছে এবং প্রতিটি বিষয় পুলিশ ডিপার্টমেন্ট ভেরীফাই করবে।
ঝিল্লীর মাথা খারাপ হবার অবস্থা। এতো এতো তথ্য তাকে দিতে হবে- সে ভাবতেও পারেনি। কিন্তু ও পিছু হটবে না। চাকুরীটি তার চাই-ই।
ঝিল্লী কোথায় কবে চাকুরী করেছে, কোন ভলেনটিয়ারী করেছে কি না, ড্রাইভিং এ কোন টিকেট খেয়েছে কিনা, তাকে কে কবে কোথায় টাকা পয়সা দিয়েছে, তার বাবা মা কোথায় কাজ করতো বা এখনও করে, দাদা কোথায়, ভাই বোন ও তাদের ছেলে মেয়েরা কে কোথায় কি করে, চাচা চাচী খালা খালু ফুফু ফুফা মামা মামীরা কে কোথায় কি করে তাদের ঠিকানা মানে দুনিয়ার যাবতীয় তথ্যাদি তাকে আলাদা আলাদা ফর্মে পূরন করে দিতে হচ্ছে।
এবার তাকে একটা পরীক্ষায় অংশ গ্রহন করতে হলো।
সেখানে প্রথম প্রশ্ন, ‘তুমি শিকার করা পছন্দ করো কি না?’ উত্তর হ্যা বা না।
সে নিজেকে সাহসী প্রমাণে উত্তর দিয়েছে ‘হ্যা’।
দ্বিতীয় প্রশ্ন, তুমি কি মনে করো- ‘জীব হত্যা করা অন্যায়?’ উত্তর হ্যা বা না।
ঝিল্লী এবার কি উত্তর দিবে!
এভাবেই ‘ট্রাফিক এনফোর্সমেন্ট এজেন্ট’ নিয়োগ এর পরীক্ষা নেয়া হচ্ছে।
এটা ভূমিকা দিলাম।
মূল প্রসংগ নিয়ে আর্টিকেল লিখবো- সেটা আগামীকাল পোষ্ট দিবো। এটার সংগে সম্পর্কযুক্ত।