আমরা জানি বাংলাদেশের ‘প্রেসিডেন্ট’ দেশের বা জাতির কোন উপকারে লাগে না।
অনেকটা সখে হাতি পুষার মতোই দেশের জন্য একখান প্রেসিডেন্ট পুষা। কাজ নেই, কর্ম নেই, জনগনের কষ্টের টাকায় সে রাজকীয় আমোদে খায়, দায়, ঘুমায়, ঘরে বেড়ায় আর ২-এক মাস পর পর আজ সিংগাপুরে বা কাল লন্ডনে যায় নিজের ও পরিবারের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করাতে এবং সেটাও জনগণের টাকায়। যে জনগণ অর্থের অভাবে নিজেদের চিকিৎসার করাতে পারে না সেই জনগণ শখ করে এরকম একটা হাতি পুষে যাচ্ছে বছরে পর বছর।
প্রেসিডেন্ট দেশের জন্য ভালো কোন কাজ না করতে পারলেও অকাজ একটা সে ঠিকই করে দেয়। সাজা প্রাপ্ত খুনী, চোর, চোট্টা, টাওট, সেনাপতির ভাই বা আওয়ামী বা ছাত্রলীগকে রাষ্ট্রপতির কোটায় ক্ষমা করে দিয়ে জেল থেকে মুক্তি দিয়ে দেয় যেন তারা নতুন শক্তি নিয়ে আবারও গণমানুষের উপর সন্ত্রাসী কর্মকান্ডে হাত লাগাতে পারে; লাগায়ও।
তারপরও দেশের মানুষ সখ করে হলেও একখান প্রেসিডেন্ট পুষে।
ঠিক আছে, এটা না মেনেই নিলেন (আমি মানি না) কিন্তু এই দেশটির জনগণ যে ৩৫০টা এমপি (সংসদ সদস্য)ও বছরের পর বছর ধরে পুষে যাচ্ছে- সেটা কি বুঝতে পারে?
নাহ, বুঝতে পারে না।
এটা আরও সুক্ষ ব্যবসা। দারুণ লাভজনক হিসাব।
তার আগে বলুন তো একজন ‘এমপি’র কাজ বা দায়িত্ব কি?
ভেরী সিম্পল। একজন সংসদ সদস্যর একমাত্র কাজ ‘দেশের আইন প্রণয়ন করা’। অর্থাৎ দেশ কিভাবে চলবে তা নির্ধারণ করে দেয়া। কিন্তু, মহাশয়, বাংলাদেশের সংসদ সদস্যরা কি আদৌ কোন আইন প্রণয়ন করে?
করে না।
দেশের প্রধানমন্ত্রী (দলীয় প্রধান) এই দেশটিতে একমাত্র আইন প্রণেতা। অর্থাৎ প্রধানমন্ত্রী যা বলবেন সেটাই বাংলাদেশের আইন। যদি তা প্রচলিত আইনে না থাকে, তাহলে জাতীয় সংসদে প্রধানমন্ত্রীর বলা বক্তব্যকে আইনে পরিনত করার ‘হুকুম’ পালন করে তার দলের সংসদ সদস্যরা।
শব্দটি ‘হুকুম’ ব্যবহার করলাম কেন?
কারণ, বাংলাদেশের সংসদ সদস্যদের হাত-হাত পা বাঁধা।
অর্থাৎ আপনি একজন স্বাধীন দেশের নাগরিক হওয়া সত্বেও যেমন স্বাধীনভাবে কোন কথা বলতে পারবেন না; কারণ দেশে ‘ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন’ (এটাও প্রধানমন্ত্রীর সমালোচনাকে কন্ঠরোধ করতে তৈরী করা হয়েছে) রয়েছে; ঠিক তেমনি বাংলাদেশের জাতীয় সংসদ সদস্যদেরও কন্ঠরোধ করার একটি আইন এই দেশে বিদ্যমান।
ঐ আইনটি বলে একজন সংসদ সদস্য দলের সিদ্ধান্তের বাইরে সংসদে ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারে না। তার হাত-পা বাধা। দলের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে মতামত দিলে- তার সংসদ সদস্য পদ কেটে নেয়া হয়।
এই আইনটিও তৈরী করা হয়েছিল ‘একজন প্রধানমন্ত্রী’ তথা দলীয় প্রধানের সিদ্ধান্তেই- তাকে আবার কেউ কেউ ‘গণতন্ত্রের মা’ও বলে থাকে অথচ তিনি নিজ হাতে গণতন্ত্রকে নপুংসক করেছিলেন। তার দলের এমপিরাও তখন এক যোগে এই সিদ্ধান্তের পক্ষে ভোট দিয়ে নিজেদের স্বেচ্ছায় ‘হাত-পা বাঁধার রাস্তা তৈরী’ করে তো ছিলোই তারচেও বড় পরিহাস তারা তখন পুরো বাঙালী জাতিটাকেই সেদিন ‘নপুংসক’ করিয়ে দিয়েছিলো। ধ্বংস করে দিয়েছিলো গণতন্ত্রের সৌন্দর্যকেও।
সুতরাং ওমন ৩৫০ জন সংসদ সদস্যরা ঐ সংসদে বসে ঠিক করেটা কি?
আর তাই তো আমরা দেখি, ওখানে শুধুই অপ্রয়োজনীয় চিল্লা-ফাল্লা ছাড়া কিছুই হয় না। কারণ যা হবার তা ‘একজন’ই সিদ্ধান্ত দিয়ে দেন। ওদের দায়িত্ব শুধুমাত্র হৈচৈ করা আর টেবিল চাপড়ানো। অনেকটা দেশী গরু ছাগলের মতো (মাঝে মধ্যে খবর হয়, দেশে গরু-ছাগলের বাম্পার ফলন)- এজন্যই বোধ হয়।
সে সংসদ সদস্য নিজের স্বাধীন চিন্তায় একটি আইন প্রণয়নে পর্যন্ত কোন ভূমিকা রাখতে পারে না- সে আবার কিসের সংসদ সদস্য? তার কাজটা কি?
সংসদ ভবনের এমপি হোষ্টেলে অফিস আর ন্যাম ফ্লাটে বিশাল সাইজের বাসা উপভোগ করা, মাস শেষে ভারী বেতন তোলা, নিজেরা শুল্কমুক্ত গাড়ী আমাদানী করা এবং জনগণতে ৩০০% টাক্সের গাড়ী কিনতে বাধ্য করা, বিভিন্ন ভাতা নেয়া, সরকরী অনুদান হাত-সাফাই করা আর এমপি পদ চলে যাবার পরও আজীবন পেনশন খাওয়া।
সত্যিই ভারী মজার দায়িত্ব।
আর এজন্যই বাংলাদেশের মানুষ সকলে নেতা হতে চায়, সংসদ সদস্য হতে চায় এবং বুড়ো হয়ে গেলে প্রেসিডেন্ট হতে চায়। এতে রাষ্ট্রিয়ভাবে সে ‘নপুংসক’ হয়ে গেলো কিনা সেটা নিয়েও চিন্তা করে না।
কারণ বেকুব বাঙালী যে এসব ‘নপুংসক’দেরও মাথায় তুলে রাখে।
কারণ তাদের দিয়ে সহজেই ক্ষমতার অপব্যবহার করে দ্রুত অসৎ পথে ধনী হওয়া যায়।
তাছাড়া বাংলাদেশের কয় জন সংসদ সদস্য ‘আইন তৈরী করার’ যোগ্যতা রাখে?
তারা করবেটাই বা কি?
কিন্তু এভাবেই চলবে দেশ?
আর কত কাল?
এই ভাবেও একটা দেশ চলে?